ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ শুরু হচ্ছে ৪০ ঘণ্টার আলোচনা

বাজেট নিয়ে সংসদে চুলচেরা বিশ্লেষণ না হওয়ার আশঙ্কা

বাজেট নিয়ে সংসদে চুলচেরা বিশ্লেষণ না হওয়ার আশঙ্কা

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য ৪০ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এবার বাজেট আলোচনার ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে প্রাণবন্ত আলোচনা আভাব হতে পারে বলে সংসদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, আজ বাজেট আলোচনা শুরু হচ্ছে। কেমন আলোচনা হবে এ নিয়ে চলছে নানা মহলে গুঞ্জন। এর আগে অনেক সিনিয়র পার্লামেন্টেরিয়ান ক্ষমতাসীন দলে থেকেও বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেন। এদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন। বাজেট আলোচনায় বিএনপির এমপিরা বিভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করতেন। অনেক কিছুর বিরোধিতা করতেন। ফলে সংসদ থাকত প্রাণবন্ত্র। কিন্তু এবার তারা সংসদে নেই। এখন যে টুকু বিশ্লেষণ করার তা জাপা এমপিদের করতে হবে। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীনদের টানা ১৫তম এবং দেশের ৫২তম বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার। সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এবার তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ছিল ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। বাজেটটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব হিসেবে ৫ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংগ্রহ করবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যন্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে আরও ৭০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরের চেয়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা কম।

প্রস্তাবির বাজেটে ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

জানা যায়, আজ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৪০ ঘণ্টা বাজেটের ওপর সাধার আলোচনা হবে। ২৫ জুন অর্থবিল ২০২৩ পাস হবে। পরের দিন ২৬ জুন বাজেট পাস হবে।

বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে।

বাজেট পাসের পর কোরবানির ঈদের জন্য অধিবেশন মুলতুবি হবে। ২ জুলাই আবার অধিবেশন শুরু হবে। সপ্তাহখানেক চলার পর বিল পাসের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অধিবেশন শেষ হবে।

এদিকে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আর্থিক কাঠামোকে ‘অলীক’ বলে আখ্যায়িত করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, বাজেটের আয় ও ব্যয় কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। কাঠামোগত এ দুর্বলতার কারণে বাজেটের বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সিপিডি বলেছে, সার্বিক অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ- এসব বিবেচনায় যে ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল সেগুলো বিবেচনা করা হয়নি বাজেটে।

সংস্থাটি আরো বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির অনুমিত প্রক্ষেপণের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। অর্থনৈতিক সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন চলক উচ্চাকাক্সক্ষী।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার বাজেট দীর্ঘদিন ধরে দুই থেকে আড়াই শতাংশের আশপাশেই থাকছে।

প্রতি বছরই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, শিক্ষার্থী বাড়ছে। কিন্তু বাজেট বাড়ছে না। ফলে গবেষণা তেমন হচ্ছে না। অথচ আমাদের গবেষণায় প্রচুর বরাদ্দ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম এসেছে। তার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণ লাগবে, অবকাঠামো লাগবে। এজন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত বরাদ্দ।

অন্য খাতে কমিয়ে হলেও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মোটা দাগে গবেষণা, লাইব্রেরি এবং কারিগরি শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বাজেট বাড়াতেই হবে। তা না হলে আমাদের সব উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত