সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশ্বের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কতদিন চলবে বলা মুশকিল

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে, তা বলা মুশকিল। হয়তো বিশ্ব পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের কারণে বিশ্বব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে, জ্বালানি তেলের অভাব, এসবের জন্য শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন দেশেও কিন্তু জ্বালানি ব্যবহার সিমিত, বিদ্যূৎ ব্যবহার সিমিত করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ উন্নত দেশে চাকরি হারাচ্ছে। এরকম একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী। জানি না, আর কখনো এ ধরনের অস্থিরতা হয়েছিল কি না।

গতকাল প্রবীন রাজনীতিবিদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আফছারুল আমিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ২ জুন আফছারুল আমীন ঢাকার একটি হাসপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হয়তো প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তিতে মনান্তর, দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু করোনার অতিমারির পরবর্তিতে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বে যে খাদ্যমন্দা, মুদ্রাস্ফীতি পরিচালন-পরিবহন ব্যয় বা বিদ্যুতের ঘাটতি এসব প্রতিটি মানুষের জীনটাকে অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, এমন একটা অবস্থা ছিল মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা ও গ্যাসের যে অভাব সারা বিশ্বব্যাপী এমন পর্যায়ে যে কেনাই মুশকিল, অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার পরেও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছে। জলবিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কয়লা আমদানির ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে, যাতে আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করতে পারব। তবে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সব জিনিষ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে, আমাদের খাদ্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কেন না, বিশ্বে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন ছলবে, তা বলা মুশকিল। হয়তো বিশ্ব পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। এজন্য তিনি সাশ্রয়ী ও নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তবু বলবো যে স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌছাচ্ছে। মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হয়েছে। এ সময় তিনি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেন।

আফছারুল আমিনের স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আফছারুল আমিন ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র লীগ করে এসেছেন, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই অংশ নেন। নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, দলের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা সত্যি অতুলনীয়। শুধু সংসদ সদস্য না, মন্ত্রী হিসেবেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সেখানে তিনি অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন। তাকে প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব দিলাম, বাস্তবে আজকে যে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা এতো সাফল্য অর্জন করেছে তার ভিত্তিটা কিন্তু তিনি করে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজে ডাক্তার ছিলেন, বিনা পয়সা রোগী দেখেতেন, এমপি হওয়ার পরও তার কাছ থেকে সবাই চিকিৎসা পেয়েছে; এই গুণটা সবার থাকে না কিন্তু তার ছিল। আমরা একে একে সব মুক্তিযোদ্ধাকে হারাচ্ছি। ’৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলতেও সাহস পেতেন না। আওয়ামী লীগ আসার পর পরিবেশটার পরিবর্তন ঘটে। আফছারুল আমিনের মধ্যে মানবিক গুণ ছিল। যেহেতু তিনি একজন ডাক্তার তাই মানুষের সেবা করা এই মানসিকতা নিয়েই তিনি চলতেন। আফছারুল আমিন সাহেব একজন নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগের। তার মৃত্যু আমাদের দেশের জন্য, আমাদের দলের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি। অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠার সাথে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। একে একে আমরা তাদের হারাচ্ছি সেটা সত্যি খুব দুঃজনক, কষ্টের। এবারের পার্লামেন্টে আমরা এত বেশি আপনজনকে হারিয়েছি, এত বেশি সংসদ সদস্য হারিয়েছি, এটা আমাদের আগে আর কখনো হয়নি।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান সদস্য তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোতাহার হোসেন, সাইফুজ্জামান, মুহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙা। আলোচনার পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গ্রহণ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সংসদে (একাদশ) আমরা যতজন বন্ধু আপনজন ও সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি অন্য কোনো সংসদে তা কখনো ঘটেনি। আফছারুল আমীন একজন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত কর্মী ছিলেন। তাকে হারানো মানে দলের ক্ষতি হলো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন ’৭৫-এর জাতীর পিতাকে হত্যার পর গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়, রাজনীতির মাধ্যমে আমরা তা ফিরিয়ে এনেছি। আফছারুল আমীন কিন্তু শুধু সে আন্দোলনে নন, সব আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আফছারুল আমীন একজন সত্যিকারের মাঠের কর্মী। তাকে হারানো মানে আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন একনিষ্ট পরিবারের সদস্যকে হারালাম। তিনি বলেন, এ পার্লামেন্টে এত বেশি এমপিকে হারিয়েছি অন্য কোনো সংসদে তা কিন্তু হয়নি।