চার অপহৃত রোহিঙ্গার কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

আট মাসে ৬৫ জন জিম্মি

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারের টেকনাফের আলীখালী ক্যাম্প থেকে অপহৃত রোহিঙ্গা কিশোর জাহাঙ্গীর আলম (১৬) এর বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তাকে ফেরত পাঠিয়েছে অপহরণকারিরা। জিম্মি থাকা অপর চারজনের মুক্তির জন্য চাওয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকার মুক্তিপণ। জাহাঙ্গীর আলম টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালীস্থ ২৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সামসু আলমের ছেলে। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে আলীখালী ক্যাম্প থেকে অপহৃত ৫ রোহিঙ্গার একজন জাহাঙ্গীর আলম। এতে অপহৃত অপর চারজন হলেন, একই ক্যাম্পের নুর হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস (৩২), মোহাম্মদ রফিকের ছেলে মোহাম্মদ সুলতান (২৪), আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৬) ও মোহাম্মদ সৈয়দের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (১৮)।

ওই ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা (মাঝি) নুরুল আমিন জানান, অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা ৫ রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতরে নিয়ে যায়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পের কাঁটাতারের পাশের পাহাড়ের পাদদেশে জাহাঙ্গীর আলমকে তার একটি হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে ক্যাম্পের লোকজন তাকে উদ্ধার করে এনজিও হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক অপরাধ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ চক্রের সঙ্গে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় অনেক অপরাধী জড়িত। যার ফলে কোনো অবস্থায় নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না অপরাধ চক্রটি। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও কার্যত কোনো সুফল আসছে না। তাই মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি কক্সবাজারে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিতে এসে অতিরিক্ত আইজি (এটিইউ) এসএম রুহুল আমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো অবস্থায় ক্যাম্পকেন্দ্র্রীক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

নুরুল আমিন আরো জানান, অপহরণকারী চক্রটি অপহৃত অপর চারজনের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা করে ২০ টাকা মুক্তিপণের দাবি করছে। না দিলে তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

টেকনাফ থানার ওসি মো. আবদুল হালিম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করছে এপিবিএনের সদস্যরা। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএন সদস্য ও থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং অপহরণের শিকার রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নের অতিরিক্তি ডিআইজি মোহাম্মদ হাসান বারী নূর বলেন, ‘আলীখালী ক্যাম্প থেকে ৫ রোহিঙ্গাকে অপহরণ ঘটনা জানার পর তাদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করার কথা জানান তিনি।

টেকনাফের পাহাড় যেন অপহরণকারির ভয়ংকর আস্তানায় রূপ নিয়েছে। গেল আট মাসে টেকনাফে ৬৫ জন ব্যক্তি অপহরণের ঘটনা ঘটে। যেখানে গত ২৮ এপ্রিল পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন কক্সবাজার চৌফলদণ্ডী উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল, তার দুই বন্ধু ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগর পাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান অপহৃত হন। ২৪ মে টেকনাফ পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গলিত মরদেহ ৩টি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এখন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছে। অপহৃত অন্যান্যরা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফেরেন।