ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরমে আরাম নষ্ট

ভোগান্তি বাড়াচ্ছে লোডশেডিং
গরমে আরাম নষ্ট

সারা দেশে চরম গরমে আরাম নষ্ট হয়েছে প্রাণিকূলের। গরমে বাইরে কাজ করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজ করতে না পারায় তাদের আয় কমেছে। তবে চলমান গরম সহসা কমছে না। গরমের সঙ্গে মানুষের ভোগান্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বারবার লোডশেডিং।

জানা গেছে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ডে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি হলেও তাপমাত্রার অনুভুতি হচ্ছে ৪৬ ডিগ্রি। বৃষ্টিপাতের সময়কাল পরিবর্তনের ফলে আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন এমন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার জন্য গরমের অনুভূতিও বেশি হতে পারে।

ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বন্দর এলাকা চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। এরমধ্যে রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করছে ২৯-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। সারা দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন তাপমাত্রা ফরিদপুরে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গোপালগঞ্জে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদী ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মোংলায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পটুয়াখালীতে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। থার্মোমিটারের পারদ যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়া আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ সারা দেশে। এর সঙ্গে দিনে-রাতে লোডশেডিং, দুর্ভোগে নতুন উপকরণ যোগ করেছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সবার, বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের কষ্ট-দুর্ভোগ চরমে। দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অনেকেই রিচার্জেবল ফ্যান লাইট ও আইপিএস কিনছেন। এই চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাতাসে আর্দ্রতা (জলীয় বাষ্প) বেশি থাকায় মানুষের দেহের স্বাভাবিক শীতলীকরণের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। শরীরের ঘাম ধীরে শুকায়। শরীর দ্রুত তাপ হারিয়ে শীতল বা ঠান্ডা হতে পারে না। ফলে ভ্যাপসা গরম ও চটচটে ভাব অনুভূত হচ্ছে। এদিকে দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিনে-রাতে সমানে লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের বেলা বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রাতের বেলা মানুষ ঘুমাতে পারছে না। মহাখালীর বাসিন্দা সোহান মির্জার বলেন, বিদ্যুতের বিল দিচ্ছি, আবার লোডশেডিং চলছে। গরমের মধ্যে রাতে লোডশেডিং হলে ঘুমানো কষ্ট হয়ে যায়। টানা দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ে গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই বিকল্প হিসেবে রিচার্জেবল ফ্যান, লাইট ও আইপিএস কিনছে। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার সহজেই চার্জার ফ্যান কিনতে পারছি না।

গতকাল সন্ধ্যায় নিউমার্কেটে কথা হয় সোলেমান রহমান নামের বেসরকারি একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে একটি চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছেন। সোলেমান বলেন, আগের রাতে তার এলাকায় অন্তত পাঁচবার বিদ্যুৎ গেছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বড়রা গরমের কষ্ট সহ্য করতে পারলেও বাড়ির প্রবীণ সদস্য ও শিশুরা তা সহ্য করতে পারছে না। তাই ফ্যান কিনতে এসেছেন। তার অভিযোগ, পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখতে পান, একেক দোকানদার একেক রকম দাম চাইছেন। দামের পার্থক্যও অনেক।

প্রচণ্ড গরমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর এবার সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রাথমিক শাখার ক্লাসও আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল সোমবার এ সিদ্ধান্ত জানান। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানিয়েছেন, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকবে। কারণ, ৭ জুন থেকে অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়ন ও পরীক্ষা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শাখাও আছে। এ ধরনের প্রাথমিক শাখাগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে এর আগে গত রোববার দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত মোট চার দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শিশুদের জ্বর, সর্দি ও পাতলা পায়খানার মতো রোগ দেখা যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো। যেতে হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। আর বারবার পানি পান করতে হবে। সেটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত