ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংশোধিত আরপিও সংসদে উপস্থাপন

* ইসির ক্ষমতা ‘সীমিত’ হচ্ছে ভোট স্থগিতে * আপত্তি জানাল জাতীয় পার্টি
সংশোধিত আরপিও সংসদে উপস্থাপন

ভোটের দিন অনিয়ম, গন্ডগোল, জবরদস্তি পেশি শক্তির প্রভাব খাটালে সুনির্দির্ষ্ট কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করার একটি নতুন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে ইসির ক্ষমতা সীমিত হচ্ছে ভোট স্থগিতে। গতকাল বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে তোলেন। বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

বিলে জানা যায়, শুধু কয়েকটি কেন্দ্রের গোলোযোগ-জবরদস্তির জন্য আর পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার পথ রোধ হচ্ছে। সব কেন্দ্রের অনিয়ম না হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধ করা যাবে না, শুধু গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারবে। এর মাধ্যমে গাইবান্ধার এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র বন্ধের পর পুরো নির্বাচনি এলাকা বন্ধের মতো ইসির ক্ষমতা সীমিত হচ্ছে। এতে জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে সব কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়া পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) কেন্দ্রের ভোট ফলাফল বা বাতিল করার ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি। আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আরপিও’র নতুন সংশোধনী প্রস্তাবের ফলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম জানান, ভোটের দিন অনিয়মের কারণে সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোর ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা থাকলেও পুরো নির্বাচনি এলাকার সব ভোট কেন্দ্র বন্ধ করায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন, জোর-জবরদস্তি, গোলোযোগ, সহিংসতায় তদন্তসাপেক্ষে পুরো নির্বাচনি এলাকার ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা (আরপিও ৯১ ক অনুচ্ছেদ) নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। তবে নতুন করে একটা সংশোধনী আনা হয়েছে, যাতে যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে; সেগুলো বন্ধ করতে পারবে, একই আসনের যেখানে সঠিক নির্বাচন হয়েছে তা বন্ধ করার ক্ষমতা কমিশনকে দেয়া হয়নি। এটাকে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি, বরং ইসিকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গেল অক্টোবরে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের সময় সিসি ক্যামেরায় এক-ততৃীয়ংশ কেন্দ্রে অনিয়ম দেখে আরপিও ৯১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেয়। এরপরই নতুন করে ৯১ অনুচ্ছেদে এবার সংশোধনী আনা হলো। নির্বাচন কমিশনই এ ধরনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার এ উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ৯১ (এ) ধারায়ও সংশোধনীআনা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সংশোধনীতে ইসির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতদিন আইনের এই ধারাতে অস্পষ্টতা ছিল। এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় রয়েছে- নির্বাচন কমিশন যদি সন্তষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।

এরপরই নতুন করে প্রস্তাব করা ৯১ (এএ) উপধারাটি।

নতুন প্রস্তাব : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এবার যে সংশোধনী আনা হয়েছে ৯১ক তে। এতে বলা হয়েছে, কোনো একটা পোলিং সেন্টারে যদি গন্ডগোল দেখা যায়; ধরেন আমার নির্বাচনি এলাকায় ১১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এখানে যদি দুটি কী তিনটিতে গন্ডগোল হয়, সহিংসতা, জবরদস্তি ঘটনা ঘটে; তাহলে এ দুই-তিনটা কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করতে পারে ইসি। কিন্তু এ দুটি-তিনটির কারণে ১১১টা কেন্দ্রে যে সঠিক নির্বাচন হয়েছে, সেটা বন্ধ করার ক্ষমতাটা এ আইনে (দেয়া হয়নি)। এখানে যে ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে সেটা দেয়া হচ্ছে না। আইনমন্ত্রী জানান, আজকে যে সংশোধনী আনা হয়েছে তা হচ্ছে ৯১ (ক) (ক)। তবে ৯১ (অ) হিসেবে একটা অনুচ্ছেদ রয়েছে; তাতে বলা রয়েছে- ইসির ক্ষমতা রয়েছে পুরো কনস্টিটিউয়েন্সির নিবন্ধন বন্ধ করে দিতে পারে। ইসি যদি দেখে কোনো নির্বাচনি এলাকায় সমস্যা হয়, জবরদস্তি থাকে, গন্ডগোল, ভোটদানে বাধা দান হলে পুরো নির্বাচনি এলাকা বন্ধ করে দিতে পারবে। তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থি নয়। ১১১টি কেন্দ্রে সঠিক নির্বাচন হয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে সেটা ইসি বন্ধ করতে পারবে না। যদি বন্ধ করতে পারত, সেটা অগণতান্ত্রিক। আরপিও সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমার সাত দিন আগে বিল পরিশোধের পরিবর্তে মনোনয়ন জমার আগের দিন পর্যন্ত পরিশোধের বিধান করা, নির্বাচনকালে পেশি শক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করা, মনোনয়ন পত্রের সাথে আয়কর সনদ জমা, গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরপিও সংশোধন প্রয়োজন। এ বিলটি আইনে পরিণত হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি। ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে- বিলের সংশোধনী নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জাপা সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আজ আরপিও দেখলাম, কিছুদিন আগে গাইবান্ধা উপনির্বাচন হয়েছে। সেটা ইসি বন্ধ করে দিয়েছে। আমি জানি না, কি কারণে মাননীয় মন্ত্রী এটা আনলেন, ইসি পুরো নির্বাচনি এলাকা বন্ধ করতে পারবে না। শুধু কেন্দ্রগুলো, যেখানে গন্ডগোল হয়েছে সেখানে বন্ধ করতে পারবে। সেখানে স্বাধীতার হস্তক্ষেপ। প্রস্তাবিত বিলে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ইসি যদি মনে করে, সকাল থেকে এখানে আরো অনেক গন্ডগোল হবে, পরিবেশ খারাপ যেটা গাইবান্ধায় হয়েছিল। দুই-তিনটির পর তারা বন্ধ করতে দিতে পারবে, সে স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনি আইনে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব গত ২৮ মার্চ নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এছাড়া টিআইএন এবং ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের কপি জমা, প্রার্থিতা বাছাইয়ে বৈধ হলেও তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ, দল নিবন্ধনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা এবং ভোটের সংবাদ সংগ্রহে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দিলে কিংবা যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করলে শাস্তি-সাজার বিধানসহ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে বিলে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাবগুলো সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। সবশেষে বিল আকারে পাসের জন্য উপস্থাপন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত