আমদানির অনুমতির পর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব

চট্টগ্রামে কমছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পাইকারি ও খচুরা বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে লুকোচুরির পর অবশেষে স্বস্তি ফিরে আসছে। আমদানির অনুমতির ঘোষণার পরই দাম কমতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি এখন ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় ঠেকেছে। ক্রেতাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজির মাধ্যমে দাম বেড়েছে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রায় মাসজুড়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। সকালে দাম বাড়লে কমে রাতে। আবার রাতে পাইকারিতে দাম বাড়লে দিনে খুচরা বাজারে কমে দাম। এভাবে দাম হ্রাস বৃদ্ধি পেতে থাকায় ক্রেতারা দুর্ভোগে পড়েন। এবার সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়ার পরপরই খাতুনগঞ্জের আড়তসহ খুচরা বাজারে দামে প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ আড়তেই বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আমদানির ঘোষণার পরপরই কেজিতে দাম কমেছে অন্তত ৩৫ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, আমদানি ঘোষণার পরপরই দাম কমে যাওয়া সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি আবার স্পষ্ট হলো। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে না পারলে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি হলে সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। স্বাভাবিকভাবেই পেঁয়াজের দাম কমবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পেঁয়াজ আমদানি অনুমতির খবরে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দাম কমতে শুরু করেছে। গত রোববার সকালে যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সন্ধ্যায় তা নেমে আসে ৭০ টাকায়। গতকালও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ছিল। প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি হলে দাম কমবেই।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, আমদানির ঘোষণার খবরে পেঁয়াজের দামে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করছি। রোববার সকালে খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ৯০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। বিকাল থেকে দাম কমতে শুরু করে। গতকালও দাম স্থিতিশীল ছিল। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দাম আরো কমবে। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে- এমন খবর প্রকাশের পরপরই দামে প্রভাব পড়তে শুরু করে। কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। রোববার কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল কোথাও ৬৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে দাম আরো কমবে।

উল্লেখ্য দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় গত ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। রোববার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৫ জুন থেকেই পণ্যটি আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

ক্রেতারা বলছেন, দাম কমার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে এসেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। দাম বাড়িয়ে তারা কয়েক সপ্তাহে ক্রেতাদের সর্বস্বান্ত করেছে। হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তারা বলেন, সরকার দেশে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় আমদানি বন্ধ রাখে। আমদানি বন্ধ হওয়ার আগে পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখনো ভারতীয় পেঁয়াজের বুকিং দর আগের মতোই আছে। তাই ভারতীয় পেঁয়াজ আসার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে আসতে পারে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোববার সকালে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। দুপুরে ৯০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা আসার পর সন্ধ্যায় সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। গতকাল আরেক দফা কমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় এসে ঠেকে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, বাজারে দেশি ও ভারতীয় দুই ধরনের পেঁয়াজের চাহিদা আছে। দেশি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় সরকার আমদানির ঘোষণা দেয়ায় পেঁয়াজের দাম কমছে। দুয়েকদিনের মধ্যে দাম আরো কমবে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, আমদানি হলেই পেঁয়াজের দাম কমবে তা আমরা আগে থেকেই জানি। এখন আমদানির ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই দাম কমছে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ এলে পেঁয়াজের আরো দাম কমবে। ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসবে পেঁয়াজের দাম। কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে কমবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির এক সদস্য জানান, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। আমদানি ঘোষণার পর দাম কমে যাওয়ায় সেই দাবির সত্যতা মিলছে। এখন দরকার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। না হয় কয়েকদিন পরপরই তারা দাম বাড়াবে। আর ক্রেতারা চড়া মূল্য দেবেন। গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসেন ক্রেতা মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমছে শুনে স্বস্তিবোধ করছি। দাম আরো কমলে কেবল ক্রেতারা স্বস্তি পাবেন। সেই সঙ্গে আমি দাবি করছি দাম বৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।