ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জীবন

দাম ও চাহিদা বেড়েছে এসি ও ফ্যানের

দাম ও চাহিদা বেড়েছে এসি ও ফ্যানের

সারাদেশে তীব্র গরমের মধ্যে চলছে লোডশেডিং। চলমান লোডশেডিং ও গরম থেকে সহজেই স্বস্তি মেলার আশা নেই। তাই অফিস-বাড়ি ঠান্ডা রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ফ্যান ও এসির বিক্রি বেড়েছে। রাজধানীর টঙ্গী, উত্তরা, মহাখালী মোহাম্মদপুর, বাবুবাজার ও যাত্রাবাড়ী সরেজমিন ঘুরে দখা গেছে, ইলেক্ট্রনিকস দোকানে কেনাবেচার হিড়িক পড়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান ও রিচার্জেবল ফ্যানে চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা বাড়তি রয়েছে। দেশে ভিশন, ওয়ালটন, ক্লিক, সানকা ও সিঙ্গারসহ বিভিন্ন কোম্পানির চার্জার ফ্যান রয়েছে। তবে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ফ্যানের দামেও প্রভাব পড়েছে।

গণমাধ্যমকর্মী বোরহান উদ্দিন রাজধানীর পল্টন এলাকায় ওয়ালটনের ব্র্যাঞ্চে ১২ ইঞ্চির চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু পছন্দের ফ্যান না পেয়ে বাধ্য হয়েই বাজেট বাড়িয়ে ১৪ ইঞ্চি ফ্যান কিনেছেন। এ বিষয়ে বোরহান উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দাবদাহে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। রাত-দিনে চরম গরমের মধ্যেই লোডশেডিং চলছে। এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে লাল রঙের চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি, কিন্তু দোকানে ১২ ইঞ্চির লাল রঙের চার্জার ফ্যান শেষ হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই বাজেট বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকায় ১৪ ইঞ্চির ফ্যান কিনতে হলো। বোরহান উদ্দিনের মতোই লাখ লাখ মানুষ চার্জার ফ্যান কিনতে এসে হিমশিম খাচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ী সিরাজ ইলেক্ট্রনিকস শো রুম এসি দেখছিলেন ফজলে কবীর নূর। শো রুমে ৩০ মিনিট ধরে এসি খুঁজছেন কিন্তু তার বাজেটে মিলছে না। তিনি বলেন, দিনে-রাতে লোডশেডিং, গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সেজন্য বাধ্য হয়ে এসি কিনতে এসেছি। কয়েকটি দোকান ঘুরোঘুরি করেও বাজেটের কাছাকাছি এসি কেনা যাচ্ছে না। আবার এসি না হলেও উপায় নেই। কারণ, মেয়ের ঘরটি ছোট। গরমে কষ্ট পাচ্ছে। ফ্যানের বাতাস থেকেও যেন আগুনের হাল্কা বের হচ্ছে। তাই এসি কিনতে হচ্ছে।

এসি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দোকানদারি করছি। এবারের মতো এত এসি কোনো বছরেই বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। গরম পড়ায় এসি বিক্রি বেড়েছে। অনেক সময় ক্রেতাদের চাহিদা মতো এসি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সিরাজুল। সিরাজ ইলেক্ট্রনিক শোরুমের মতোই রাজধানীতে ট্রান্সটেকসহ ওয়ার্লপুল, স্যামসাং, প্যানাসনিক ও হিটাচির ফ্রিজ, এসি বিক্রি করছেন।

কারওয়ান বাজারে ব্যাটারিচালিত টেবিল ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও সিলিং ফ্যান বিক্রি বেড়েছে বলে জানান বিক্রয়কর্মী মোজাইদুল। তিনি বলেন, গরমে ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু সরবরাহ পেতে সময় লাগছে। তাই বড় সিলিং ফ্যানের দামও একটু বেড়েছে। বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে এয়ারকুলারের দাম ১৫ হাজার ৫০০ থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা, এসি টনভেদে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। একই মার্কেটে ওয়ালটনের শোরুমেও ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে। এখানে ক্রেতারা কিস্তিতে পণ্য কেনার সুবিধা পাচ্ছেন।

মোহাম্মপুরের বাসিন্দা জাহিদা পারভীন বলেন, এবারের তাপমাত্রা গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে বাঁচতে ফ্যান কিনতে দোকানে ভিড় করছে মানুষ। তবে দাম বাড়ায় ফ্যান কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তামান্না ইলেক্ট্রনিক দোকানের মালিক বলেন, এই গরমে বেচাকেনা বেড়েছে। তার সঙ্গে দামও বেড়েছে। যে কারণে অনেক ক্রেতা চার্জার ফ্যান কিনতে এসে বাজেট মেলাতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। এমন ক্রেতাও আছে যিনি সিলিং ফ্যান কিনতে এসে কম দামে খাঁচা বা চার্জার ফ্যান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ফ্যান বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সিলিং ফ্যান সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা। তবে ভালো ব্র্যান্ডের বেশি দামের ফ্যানও আছে। এসব ফ্যানে বছরের ব্যবধানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে। খাঁচা ফ্যানের দাম ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে চার্জার ফ্যানের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। লোডশেডিংয়ে গরম থেকে রেহাই পেতে বিত্তবানদের এসির ব্যবস্থা থাকলেও গরিবের ভরসা চার্জার ফ্যান। চার্জার ফ্যানের চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে। ১২ ইঞ্চি আকারের একটি চার্জার ফ্যানের দাম ৪ হাজার টাকা এবং ১৪ ইঞ্চির আকারের একটির দাম ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পওয়া যাচ্ছে। এর থেকে বড় আকারের চার্জার ফ্যানের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত