ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জমজমাট কুমারখালীর কাপড়ের হাট

কোটি টাকার বেচাকেনা
জমজমাট কুমারখালীর কাপড়ের হাট

প্রায় দেড়শ’ বছর আগে ১৮৬৯ সালে গড়াই নদের তীরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ঐতিহ্যবাহী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় গড়ে উঠেছে লুঙ্গি-গামছা বেচাকেনার কাপড়ের হাট। সেই কাকডাকা ভোরেই শত শত তাঁতি, ফড়িয়া তথা মধ্যস্থতাকারী এবং কাছে ও দূরের ব্যবসায়ীদের পদচারণায় বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে ওঠে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার। বেচাকেনা শুরু হয় সকাল ৬টায়, চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ততক্ষণে কমবেশি ৪ কোটি টাকার লুঙ্গি বিক্রি হয়। তবে অধিকাংশ কেনাবেচাই হয়ে যায় সকাল নয়টার মধ্যে।

গত শনিবার হাটবারের সকাল ৭টায় আলাপ হয় কাপুড়িয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানার সাথে। তিনি জানান, সেদিন প্রায় ৫০ হাজার থান বা ২ লাখ পিস লুঙ্গি বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লুঙ্গির গড় দাম ২২৫ টাকা ধরলে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪ কোটি টাকায়। তবে করোনার আগে আরো অনেক বেশি টাকার লুঙ্গি বিক্রি হতো। তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ১৮৬৯ সালে গড়াই নদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠে কুমারখালী পৌরসভা। তখন থেকেই শেরকান্দি এলাকায় যাত্রা শুরু হয় কাপুড়ের হাটের। সেই থেকে কুমারখালীর অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে বুননশিল্প। আর এই বুননশিল্পের সুবাদেই কুমারখালী তাঁতশিল্প কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই হাটে আসা তাঁতি ও ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার বাসিন্দা।

কুষ্টিয়ার পার্শ্ববর্তী পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দূরদূরান্তের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসে নিজেদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী লুঙ্গিগামছা কিনে নিয়ে যান।

স্থানীয় তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার সময় লকডাউনের কারণে বাসসহ অন্যান্য যানবহন চলাচল বন্ধ থাকায় এই হাটে বেচাকেনা কমে একেবারে তলানিতে

ঠেকেছিল। পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে আবার জমতে শুরু করে হাট। তবে এখনো বেচাবিক্রি করোনার আগের অবস্থায় ফেরেনি। তখন প্রতি হাটে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার লুঙ্গি বিক্রি হতো। এই হাটে একটি বড় টিনশেড বা আধা পাকা ঘরে বিপুলসংখ্যক দোকানে লুঙ্গি বেচাকেনা হয়। টিনশেড ঘরের চারদিকে গড়ে ওঠা অনেকগুলো ছোট ছোট ঘরেও কেনাবেচা হয়। ইদানীং এই হাটে মান ও আকারভেদে প্রতি থান লুঙ্গি ৬৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বেচাকেনা হয়ে থাকে। এক থানে চার পিস লুঙ্গি থাকে।

বেচাকেনার এক ফাঁকে কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের উত্তরপাড়া এলাকার তাঁতি রুহুল আমিন জানান, তাঁর প্রায় ২০০টি পাওয়ার লুম (আধুনিক তাঁত) রয়েছে। ওই দিন তিনি ১ হাজার ৬০ টাকা দরে ১ হাজার ৫০০ থান লুঙ্গি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রায় প্রতি

হাটেই তিনি ১৫ কেকে ১৬ লাখ টাকার লুঙ্গি বিক্রি করেন। চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা গ্রামের ছোট তাঁতি আবদুল লতিফ বলেন, রং ও সুতার দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় লুঙ্গির দাম বাড়েনি। তাই এখন লাভ কম হয়। একেক হাটবারে ৮০০ টাকা দরে ৫০ থানের মতো লুঙ্গি বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪০ হাজার টাকা পান। ফড়িয়া রাজু আহমেদ বলেন, বাইরের জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের তিনি প্রতি হাটে

৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার মাল কিনে দেন। এক হাটবারে চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন জানান, তিনি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাল কিনেছেন। প্রতি থানের দাম পড়েছে ৭২০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০

টাকা। কুমারখালী তাঁত বোর্ডের উপমহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান জানান, এই উপজেলায় প্রায় সাত হাজার তাঁতি

আছেন। প্রতি হাটে চার থেকে ৫ কোটি টাকার লুঙ্গি বেচাকেনা হয়। করোনার আগে লেনদেন আরও বেশি ছিল। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ী, মহাজন ও ফড়িয়াদের পদচারণায় প্রায় ১৫০ বছর আগে ১৮৬৯ সালে গড়াই নদের তীরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ঐতিহ্যবাহী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় গড়ে উঠা লুঙ্গি-গামছা বেচাকেনার কাপুড়ের হাট ব্যবসা আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেচাকেনা আগের চেয়ে অনেক অনেক ভালো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত