ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ছয় দফা দিবসে প্রধানমন্ত্রী

বিদেশিদের কাছে বাঙালি মাথা নত করে না

বিদেশিদের কাছে বাঙালি মাথা নত করে না

দেশি-বিদেশি চাপের কাছে বাঙালি মাথা নত করে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশি-বিদেশি যত চাপ আসুক না কেন ওই চাপের কাছে বাঙালি মাথা নত করে না। আমার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরা সুরক্ষিত করব। গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। আমরাই আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। এই গণতন্ত্রিক অধিকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এই নীতির ওপর দাঁড়িয়ে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনেছি। বিএনপি শুধু ভোট চোর না, তারা তো ভোট ডাকাত। দুই দুইবার ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। শুনে আমার হাসি পায়, ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। কোন গণতান্ত্রিক ধারায় জন্ম হয়েছিল বিএনপির? তারা এখন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলতে বলতে অস্থির। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, হ্যাঁ-না ভোট করে তা বৈধ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ভোট কারচুপির সূচনা হয়েছে বিএনপির মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা দিয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে, দেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোটচুরি করে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল খালেদা জিয়া। হত্যার রাজনীতি, মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এসব তো শুরুই করেছিল জিয়াউর রহমানের বিএনপি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির শাসনামলে কিছুই পায়নি দেশবাসী। খুনিদের পুরস্কৃত করাই তাদের নীতি ছিল। খালেদা-তারেক জিয়ার অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার দেশের মানুষ। বিএনপির দুঃশাসন কী ভুলে গেছেন, দেশবাসী? আন্দোলন-সংগ্রাম করে নাকি আমাদের সরকারকে উৎখাত করবে। বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। ওটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নেই। আমি বলে দিয়েছি, বিএনপি যত আন্দোলন করে করুক। আমরা কিছু বলব না। আমাদের নজর রাখতে হবে, তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে কি না, মানুষকে পুড়িয়ে, হাত-পা কেটেছে কি না। সেটা যেন করতে না পারে। তারা ভেবেছে, বিদেশিরা তাদের নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। আসলে বাইরের শক্তি তাদের ব্যবহার করবে। কিন্তু ক্ষমতায় বসতে দেবে না। ক্ষমতায় কোনো দলকে বসাতে পারে শুধুমাত্র দেশের জনগণ।

সম্প্রতি লোডশেডিং প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়েছে। আমরা যে এলএনজি ও গ্যাস আমদানি করি সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে। আর আমরা নিজেরা কূপ খনন করে গ্যাস উৎপাদন করেছি। এসব কিছুর মধ্যেও আমরা ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সেই বিদ্যুতের এখন অসুবিধা হচ্ছে। আমরা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমি জানি মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তাদের কষ্ট আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দু-একদিনের মধ্যে আরো ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে, ১০ থেকে ১৫ দিন পর আরো যুক্ত হবে। তারপর আর কষ্ট থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে এটা তো আমরা ভাবতেই পারি না। সেই সঙ্গে বৃষ্টি নেই। আমাদের সবার কষ্ট হচ্ছে আমরা সেটা বুঝতে পারছি। কীভাবে এ কষ্ট থেকে লাঘব পাওয়া যায় সেটার চেষ্টা আমরা করছি। এটা শুধু আমাদের একার কষ্ট না, এটা সারা বিশ্বে হচ্ছে।

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে পারব। পাশাপাশি আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গার্মেন্টসের ওপর নির্ভর করে থাকব না। আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এই ডিজিটাল ডিভাইস আমরা তৈরি করব। এরইমধ্যে অনেক বিনিয়োগ আসছে। একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আসছে। আইসিটি, ডিজিটাল ডিভাইস এগুলো উৎপাদন করে আমরা রপ্তানি করব। আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী আছে, যারা বুদ্ধি বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা বুদ্ধিজীবী। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি, তারা এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে বক্তৃতা দেয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নেয়। প্রাইভেট টেলিভিশনও আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। সেই টেলিভিশনের টক শোতে এসে আলোচনা করে- প্রস্তাবিত বাজেট আওয়ামী লীগ কোনোদিনও কার্যকর করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, করতে পারব সেটা বুঝে শুনে আমরা বাজেট দিয়েছি। আমরা যা দিয়েছি আমরা তা করতে পারব।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি আরও বলেন, ৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ ২০ দলীয় জোট করেছিল, আর আওয়ামী লীগ ছিল একা। তাদের ধারণা ছিল ২০ দলীয় জোট কমপক্ষে ২০টা সিট পাবে, কিন্তু পেয়েছিল মাত্র দুইটা সিট। সমগ্র পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ সিট পেয়ে যায়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। ছয় দফা মানুষ লুফে নিয়েছিল, এই ছয় দফা থেকে এক দফার উত্থান। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন ছয় দফা তিনি দিয়েছেন। কিন্তু ছয় দফার প্রকৃত অর্থ হলো এক দফা, অর্থাৎ স্বাধীনতা। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ নির্বাচন অনেক শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তাতে আমাদের দেশে অনেক দল অনেক নেতা নির্বাচনে যেতে রাজি ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি নির্বাচন করবো। শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে ৭০ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কে জনগণের নেতা সেটা নির্বাচিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকদের আমলে বাঙালিদের কোনো অধিকার ছিল না। চিরদিন অবহেলিত ছিলাম আমরা। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা পেশ করার সময় বাধা দেয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রেস কনফারেন্স করেন। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে একটা পাস করানো হয়। কাউন্সিল ডেকে কাউন্সিলে একটা পাস করানো হয়। মাত্র কয়েক মাসে সারা বাংলাদেশ ঘুরে ছয় দফার ব্যাপক প্রচার করেন। যে কোনো একটা দাবি এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মধ্যে সাড়া জাগানো, এটা ছিল একটা অভূতপূর্ব ঘটনা। যেটা ছয় দফার ব্যাপারে হয়েছিল।

আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে। জনগণের ভোটে সবসময় ক্ষমতায় বসেছে। জনগণ সঙ্গে থাকলে আওয়ামী লীগ কখনো পরাজিত হয়নি বলেও যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাহজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ। আলোচনা সভায়টি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত