ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিনোদন স্পট ভ্রমণ

চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে পর্যটক বাস সার্ভিস

চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে পর্যটক বাস সার্ভিস

চট্টগ্রাম নগরীতে চালু হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটক বাস সার্ভিস, যা ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস নামেও পরিচিত। নগরীর কয়েকটি নির্ধারিত গন্তব্য হতে পর্যটকদের নিয়ে বাসগুলো রওয়ানা দেবে বিনোদন স্পটে। পর্যটকদের জন্য সাধারণ বাসের পাশাপাশি ছাদ খোলা বাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নগরবাসীর মনে এই বাস সার্ভিস নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতূহল। অনেকে দারুণ খুশি কম ভাড়ায় নগরীর অভ্যন্তরে বিনোদন স্পটে চলাচল সুবিধার ব্যবস্থা নেয়ায়। আগামীকাল শনিবার থেকে পুরোদমে চলাচল করবে পর্যটক বাস।

গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে ট্যুরিস্ট বা পর্যটক বাস সার্ভিসের বিস্তারিত তুলে ধরেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) পরিচালক ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) আবু রায়হান দোলন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান, জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জামসেদ আলম রানা প্রমুখ। দুপুর ১২টায় নগরীর সার্কিট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও পর্যটন করপোরেশনের সহায়তায় শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামে হাফ ডে ও ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস চালু করব। পর্যটন খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর। সার্ভিস সম্পর্কে ধরে তিনি বলেন, গুলিয়াখালী, পারকিসমুদ্র সৈকত ও চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শনের জন্য চালু করা হবে পর্যটন বাস সার্ভিস। এ কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি সেবার জন্য, ব্যবসার জন্য নয়। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, নদী, সমুদ্র আর সবুজ বনাঞ্চলে সমৃদ্ধ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে সুপরিচিত। এখানে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম নান্দনিক ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্তিত এই সমুদ্রসৈকতটির জনপ্রিয়তা পর্যটকদের কাছে দিন দিন বাড়ছে। কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা

সমুদ্রসৈকতে বিকাল এবং সূর্যাস্তের সময় অনেক পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের ফৌজদারহাটে অবস্থিত জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ডিসি পার্ক দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের পর্যটনপ্রেমী মানুষের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং ডিসি পার্কে যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম আগামীকাল থেকে নগরের টাইগার পাস-ডিসি পার্ক (ফৌজদারহাট)-পতেঙ্গা রুটে দুটি ডাবল ডেকার (একটি ছাদ খোলা) বাস চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাস সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আগামীকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দুপুর ১২টায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বাস চলাচল সার্ভিসের শুভ উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।

চলাচলের সময়সূচি : পর্যটক বাস দুটি চট্টগ্রাম শহরের টাইগারপাস হতে যাত্রা শুরু করে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে যাবে এবং পুনরায় একই রুটে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত হতে ডিসি পার্ক হয়ে টাইগারপাস ফিরবে। সার্ভিসটির প্রতি শুক্রবার তিনটি ট্রিপ যথাক্রমে সকাল ৯টা, বিকাল ৩টা, বিকাল ৪টা। প্রতি শনিবার চারটি ট্রিপ যথাক্রমে সকাল ৯টা, সকাল ১০টা, বিকাল ৩টা ও বিকাল ৪টা। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন দুটি ট্রিপ যথাক্রমে বিকাল ৩টা ও বিকাল ৪টায় চট্টগ্রামের টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। শুক্রবার তিনটি ট্রিপ যথাক্রমে দুপুর ১২টা, সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৮টা। প্রতি শনিবার চারটি ট্রিপ যথাক্রমে দুপুর ১টা, দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা, রাত ৮টায় পতেঙ্গা থেকে একই রুটে ফিরে আসবে। পর্যটক বাস সার্ভিসে ভ্রমণের জন্য টাইগার পাস থেকে ডিসি পার্ক ৪০ টাকা, ডিসি পার্ক হতে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ৩০ টাকা, টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ৭০ টাকা করে একইভাবে পতেঙ্গা থেকে ডিসি পার্ক ৩০ টাকা, ডিসি পার্ক থেকে টাইগারপাস ৪০ টাকা, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে টাইগারপাস ৭০ টাকা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভ্রমণপ্রত্যাশীদের চাহিদা বাড়লে ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এসি বাস যোগ করা হবে। নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মিন্টু চৌধুরী বলেন, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিনোদন স্পটগুলো সহজে কম ভাড়ায় পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার। দীর্ঘদিন পর জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ায় স্বস্তি বোধ করছি। আমরা চাই পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হোক। যাতে সবাই ইচ্ছে মতো পর্যটক

বাসে ঘুরতে পারে। বাস কাউন্টারে চাহিদার সমান টিকিট পায়। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে চট্টগ্রামই একমাত্র শহর যেখানে চারটি বিনোদনের স্পট এক সাথে দেখা যায়। তা হচ্ছে লেক, পাহাড়, বিচ ও নদীর পাড়। বাংলাদেশ তো নয়ই, বিশ্বের অনেক বড় শহরে একসাথে চারটি ভ্রমণের অনুষঙ্গ মেলানো যায় না। আর আমাদের একটি শহরেই চারটি বিশেষ ভ্রমণ স্পট পাওয়া যায়। এসব জায়গায় ভ্রমণ করার জন্যই মূলত পর্যটক বাসের চলাচল শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে শুধু ভ্রমণপিপাসুরা থাকবেন। অন্য যাত্রীরা পর্যটকদের বিরক্তের কারণ হবেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত