ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা

পাস মার্কও পাচ্ছেন না ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী

* প্রশ্ন ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন * শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিতের পরামর্শ
পাস মার্কও পাচ্ছেন না ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যার চেয়ে অনার্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার ভাগ্যে জোটে না এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যক ন্যূনততম পাস মার্ক পান। অর্থাৎ, ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াতো দূরের কথা পাস মার্কই পান না।

এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা শর্ত পূরণকারী তথা যোগ্যরাই কেবল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাসের হারের বর্তমান চিত্র দেখে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে কেউ কেউ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন খুব কঠিন হয় বলে মন্তব্য করলেও অনেকের মতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানে ঘাটতি আছে। যে কারণে মফস্বলের এবং কোচিং বা বিশেষ প্রস্তুতি না নেয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের (গ ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাস করেছেন মাত্র ১১.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি ৮৮ দশমিক ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন। অর্থাৎ, এসব শিক্ষার্থী ন্যূনতম পাস মার্ক ৪০ নম্বরও পাননি।

সূত্র মতে, এ বছর ‘গ’ ইউনিটে আবেদন করেছিলেন আবেদন করেন ৪১ হাজার ৩৬৮ জন শিক্ষার্থী। আর পরীক্ষা দিয়েছেন ৩৮ হাজার ২২৫ শিক্ষার্থী। পাস করেছেন মাত্র ৪ হাজার ৫২৬ শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত এই ইউনিটে গতবার পাসের হার ছিল ১৪.৩০ শতাংশ।

ব্যবসায় শাখা ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ১ হাজার ৫০টি। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৯৫টি, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫টি এবং বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৯৩০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিটে ৫ হাজার ৯৬৫টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩০ জন।

ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হারের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মঈন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসের ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করা হয়। পরীক্ষার বিস্তারিত সিলেবাস প্রসপেক্টাসে আগেই উল্লেখ করা হয়। তাই সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষার খাতাও নিয়ম মাফিক দেখা হয়। তারপরও এতসংখ্যক শিক্ষার্থী কেন ফেল করে, তা জানা নেই। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের আরো পড়াশোনা এবং উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয় না, তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে; দেশের অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসে। আর মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একদিকে যেমন ইতিপূর্বে রাজনৈতিক বিবেচনায় মেধাহীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তেমনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইন্স ল্যাবসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই। যে কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার ঘাটতি নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। যার নেতিবাচক প্রভাব ধরা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়।

তবে অনেকটা ভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন ‘ইউসিসি’ নামের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সংশ্লিষ্ট একটি কোচিংয়ের পরিচালক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারী। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অনেক কঠিন হয় উল্লেখ করে তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক মেধাবী। প্রশ্ন করার সময় তাদের কাছে সহজই মনে হয়। বাস্তবে অনেক প্রশ্ন এমন কঠিন যে, তার উত্তর দেয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা কনফিউজড হয়ে যায়। যেমন এবার একাউন্টের ১২টি অঙ্ক প্রশ্নের মধ্যে অন্তত ৮টি ক্যালকুলেটর ছাড়া করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আন্দাজে উত্তর দিয়ে থাকে। মানবিকসহ অন্যান্য বিষয়ের কিছু প্রশ্নও খুব কঠিন করা হয়েছে। অনেক প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরেও চলে যায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সিলেবাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জন করতে হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’-এ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ফল গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।

এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’র ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৯.৬৯%। ১ লাখ ১৫ হাজার ২২৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৬৯ জন। এই ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ৯৩৪টি।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ‘বিজ্ঞান ইউনিট’র ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৩ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ১০৯ জন। পাসের হার ৯.৪৩ শতাংশ।

‘চারুকলা ইউনিট’র ভর্তি পরীক্ষায় ৪ হাজার ৭২৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১২ জন। পাসের হার ৪.৪৯ শতাংশ।

অবশ্য এ বছর গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটে পাসের হার ৪৩ দশমিক ৩৫, বি ইউনিটে ৫৬ দশমিক ২৬ এবং সি ইউনিটে ৬৩ দশমিক ৬৪।

তাই তুলনামূলক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার অনেক কম। প্রশ্ন কঠিন হওয়ার কারণেই মূলত, পাসের হারের এই চিত্র বলে অনেকে মনে করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত