ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

অনিশ্চয়তায় রাজনৈতিক সমঝোতার পথ

অনিশ্চয়তায় রাজনৈতিক সমঝোতার পথ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ দৃশ্যত: অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে তাদের অবস্থানে অটল। দলটির দুয়েকজন নেতা সংলাপের কথা বললেও তারা তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না। বিএনপি তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার দাবিতে অবিচল। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে এখন আর তেমন একটা তৎপর দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে নিজেদের মনোভাব নিয়ে অনড় অবস্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধীদল বিএনপি। কেউ কাউকেই ছাড় দিতে রাজি নয়। তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা যায়, ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও তত বাড়ছে। তবে পর্দার আড়ালে কি ঘটছে এ নিয়ে অগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের ধারণা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতারা ‘গোপনে’ নিজেদের মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটা আলোচনার মধ্যে রয়েছেন। নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়ার মতো ঝুঁকি কোনো দলের নেতারাই নেবেন বলে দৃশ্যত: মনে না হলেও রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হওয়ার অনিশ্চয়তা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বিগত দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিকরা যেভাবে তৎপর ছিলেন আগামী নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে কূটনৈতিকদের তৎপরতা দৃশ্যত তেমন একটা চোখে পড়ছে না।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চলছে। এই সংবিধানের ভিত্তিতে যে কোনো সংকট সমাধান করতে আমরা প্রস্তুত। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আসুন, গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি। আলোচনার দ্বার খোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপ নিয়ে ভাববো কি না সেটা পরের বিষয়। গতবারের কথা আমাদের মনে আছে। একবার নয়, দুইবার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেব মনে করছেন, আওয়ামী লীগ তাদের সংলাপে ডাকবে। অথচ এই সংলাপের কথা আমরা ভাবছি না। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদেশ্যে প্রশ্ন রাখেন নিরপেক্ষ কে? আপনার নেত্রী বলেছেন শিশু ও পাগল। শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। কাজেই আপনি শিশু এবং পাগলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করুন। তারপর বোঝা যাবে কী হবে। আর এটা নিয়ে মাথা খারাপ করে কাজ নেই। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরে আসবে না, তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। এই মরা জিনিসকে আর জীবিত করার চেষ্টা করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেনি, এটা নিষিদ্ধ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

তিনি বলেন, আমাদের সংলাপের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। বিদেশি কাউকে হস্তক্ষেপ করতে হবে, এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট দেশে তৈরি হয়নি। আমাদের নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব।

এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অধীনেই নির্বাচনের ছক কষছে। এই ছক ভ-ল করে কোনো কৌশলে বা কী ধরনের কর্মসূচি দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা যায়, নতুন ধাপের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হবে সেটি। মার্কিন নতুন ভিসানীতিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার যদি সংঘাত এড়িয়ে সামনের দিকে এগোতে চায় তাহলে বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে নিয়ে প্রথমে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা ২০১৮ সালে তাদের কথা বিশ্বাস করে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিণতি কী হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন। তারা পদত্যাগ করুক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলতে সম্মত হোক। তাহলেই তো হয়ে যায়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ‘অনির্বাচিত ও অবৈধ’। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট সমাধান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্যে ‘এলোমেলো’।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত আছি জাতিসংঘের সমঝোতার মাধ্যমে। আবার শুনলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘না, এটা সঠিক না। তাহলে ওবায়দুল কাদেরেরটা সঠিক, নাকি আমির হোসেন আমুরটা সঠিক?

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পরিষ্কারভাবে বললেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। তারপর এই সংবাদ কতক্ষণ যাওয়ার পর, দুই ঘণ্টা চলার পর, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে প্রচারের পর প্রত্যাহার করলেন। প্রত্যাহার করলেন কে? মন্ত্রী প্রত্যাহার করেছে মন্ত্রণালয় থেকে। অতএব ‘এলোমেলো’ যে হচ্ছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন করে কোনো সংলাপের সুযোগ নেই।

সিইসি বলেন, ‘বিএনপিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিএনপি আমাদের সে অনুরোধ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে অনড়। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আর কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত