শুরু হলো ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন

ঢাকায় বসে পাওয়া যাবে রাজশাহীর সুস্বাদু আম

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এই ট্রেন চালুর মধ্যদিয়ে ঢাকায় বসে পাওয়া যাবে রাজশাহীর সুস্বাদু আম। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রধান অতিথি হিসেবে বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে একটি ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে টানা চতুর্থবারের মতো এ রুটে এই বিশেষ ট্রেন চালু করেছে। জোনের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের কল্যাণে কম খরচে এই আম পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ৩০০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা ৬টায়, আর রাজশাহী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাবে রাত সোয়া ১টায়।

কার্গো ট্রেনটি প্রতিদিন ৮ বা ৯টি ওয়াগনে সর্বোচ্চ পরিমাণ আম পরিবহন করবে। তাই, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত পণ্য পরিবহন করতে পারবেন।

রাজশাহী থেকে ঢাকায় এক কেজি আম পরিবহন করতে ১ টাকা ১৭ পয়সা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আনতে ১ টাকা ৩০ পয়সা খরচ পড়বে। অসীম তালুকদার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বিশেষ ট্রেনে আম পরিবহনে প্রতি টনে খরচ হবে ১ হাজার ১১৭ টাকা, আর কুরিয়ার সার্ভিসে প্রতি টনে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা এবং প্রাইভেট ট্রাকে প্রতি টনে খরচ হয় প্রায় ২ হাজার টাকা।

রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা ট্রেনটি ১১টি স্টেশনে আম বোঝাই করার জন্য থামবে। পার্সেল বুকিং ও খালাসের ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য স্টেশনে এই পার্সেল ট্রেনটি থামতে পারে।

আম ছাড়াও কম খরচে সব ধরনের সবজি, মৌসুমি ফল, ডিম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য এই বিশেষ ট্রেনে পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। রেলওয়ের কুলিরা সব ধরনের পণ্য উঠানো ও নামানোর কাজ পরিচালনা করবে। এই লক্ষ্যে, পণ্য বুকিং থেকে বোঝাই করার পাশাপাশি সঠিকভাবে নামানো পর্যন্ত কুলিরা কীভাবে কাজ করবে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

চাষিদের পরিবহন সমস্যা কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয় এ ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’।

কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহীতে ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবছর ২ লাখ ৪৪ হাজার টন আম ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নওগাঁয় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে, তবে এই জেলায় ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪২ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং নাটোর জেলায় ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ২১ টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চলতি আম মৌসুমের উদ্বোধনী দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১৩ হাজার ৬৬৫ কেজি আম নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসলেও ৬টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি স্টেশনে বুকিং হওয়া ১৩ হাজার ৬৬৫ কেজি আমের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ১৫০ টাকা। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লহ ও রহনপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম।

প্রথম দিনে আম পাঠান ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই ট্রেনে করে তিনি আম পাঠান। এ মাধ্যমে খরচ কম ও আম পচে যাওয়া, নষ্ট হওয়া, হারিয়ে যাওয়ার মতো তেমন ঝুঁকিও নেই। এমনকি রাতের মধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম পৌঁছে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, গত বছরের মতো এবারও বিভিন্ন নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আম বুকিংকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে আম বুকিং করা হচ্ছে। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে শুধু আম নয়, আমের সঙ্গে শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফলমূলও পরিবহন করা যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানীগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা। দ্বিতীয় বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি। রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। সর্বশেষ গতবছর এই ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়। এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।