ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লবণাক্ততা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট

স্বাভাবিক হয়নি ওয়াসার পানি সরবরাহ পরিস্থিতি

স্বাভাবিক হয়নি ওয়াসার পানি সরবরাহ পরিস্থিতি

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে লবণাক্তা এখনো কমেনি। টানা বৃষ্টি না হওয়ায় হালদা নদীর পানিতে লবণাক্তা কমছে না। নগরীর বড় অংশে লবণাক্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে প্রতিদিন। লবণাক্ততার সঙ্গে নতুন সমস্যা হিসাবে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ওয়াসার পাম্প হাউজগুলো নিরবচ্ছিন্ন চালানো যাচ্ছে না। এতে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। লবণাক্ততা ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দুই সমস্যায় পানি সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না বলে জানান ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে সমক্ষমতার পুরো অংশ উত্তোলন ও সরবরাহ করতে পারে না। লবণাক্ততার কারণে ওয়াসা নদী থেকে পানি শোধনাগারে কম পানি গ্রহণ করতে পারছে। আবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণেও দৈনিক উদপাদন কমে গেছে অন্তত ৫ থেকে ৬ কোটি লিটার।

ওয়াসার সরবরাহ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা যায়, নগরীর অন্তত অর্ধেক এলাকায় পানি সরবরাহ পরিস্থিতি এলোমেলো। বিশেষ করে হালিশহর, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, ষোলশহর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, কোতোয়ালি মোড়, দুই নম্বর গেট এলাকার গ্রাহকরা চাহিদার সমান পানি পায় না। আবার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, মোহরা এলাকা, বাদুরতলা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহে শুরু হয়েছে রেশনিং। এসব এলাকায় এক ঘণ্টার জন্য আবার কোনো এলাকায় দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। কোনো এলাকায় সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে কেবল তিনদিন পানি সরবরাহ করা হয়। এদিকে পানি সরবরাহ বিঘ্নি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। তারা পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার জন্য সরাসরি ওয়াসাকে দায়ী করে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, পানি উৎপাদন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ওয়াসা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে মোহরা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাছে লবণাক্তা কিছুটা বেশি। এজন্য মোহরা প্লান্টে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে লবণাক্তা সমস্যার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। সব কিছু খুব সহসা স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশাবাদী।

ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেশি দাবি করেছেন দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এক সময় দৈনিক চাহিদা ৫০ কোটি লিটার ছিল। উৎপাদন হতো ১৮ কোটি বা ২০ কোটি লিটার। এখন উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে। এখন দৈনিক পানি উৎপাদন ক্ষমতা আছে ৫০ কোটি লিটার। চারটি শোধনাগার থেকে ওয়াসা পায় ৪৬ কোটি লিটার পানি। এরমধ্যে লবণাক্ততা সমস্যার কারণে দৈনিক ৩৭ থেকে ৩৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে পারে সংস্থাটি। শোধনাগারের পাশাপাশি ৪৯টি গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন হচ্ছে। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় নিয়মিত সরবরাহ মেলে। কিন্তু হঠাৎ পানি সরবরাহ দুই বা তিন দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহান। যেসব ভবনে গভীর নলকূপ আছে তারা কিছুটা স্বস্তির মধ্যে থাকে। বিকল্প উপায়ে পানি ট্যাঙ্কে ভর্তি করার সুযোগ থাকে। যাদের ভবনে গভীর নলকূপ নেই তাদের ওয়াসার পানিই একমাত্র ভরসা। মূলত ওয়াসার পানি সরবরাহ কমে গেলে তারাই বেশি দুর্ভোগে পড়েন। ওয়াসা সূত্র জানায়, লবণাক্ততা সমস্যার কারণে গেল মার্চ মাস থেকে পানি উৎপাদন সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। আর এই পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ নিয়মিত আসছে দামপাড়া এলাকার ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে। লবণাক্ত সমস্যা সমধান হতে পারে ভারি বৃষ্টিপাত হলে। সামনে বর্ষা মৌসুম আসন্ন। ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে জোয়ারের সঙ্গে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদীর পানির সঙ্গে মিশবে না। আর তখনই ওয়াসার চলমান লবণাক্ত সংকট কেটে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত