আসছে বর্ষা মৌসুম

পাহাড়ের পাদদেশ ছাড়েনি ঝুঁকিপূর্ণ বসতিরা

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামিম রহমান, চট্টগ্রাম

বৃষ্টির কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে নগর জীবনে। কমেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। তবে নতুন শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে আসন্ন বর্ষার ভারিবর্ষণ। চট্টগ্রাম নগরীর চারদিক পাহাড় বেষ্টিত। ভারিবর্ষণে এবারও পাহাড় ধসে মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতি বছরই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসন ফায়ার সার্ভিস মাইকিং করেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে লোকজনকে পুরোপুরি সরাতে পারে না। এখনও বাস করছে বিপুলসংখ্যক লোকজন। তাই এবারও মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ের পাদদেশে এখনও অবস্থান করছে কয়েক হাজার মানুষ। এসব লোকজনকে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা সেখানে বসবাস করার সুযোগ দিয়েছে। চিহ্নিত মাস্তানরা নিয়মিত ভাড়া তুলে পাহাড়ের পাদদেশে বাসকারি লোকজনের কাছ থেকে। দেয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। কাঁচাঘরের পাশাপাশি রয়েছে বিপুলসংখ্যক আধাপাকা ঘর। এসব ঘরে বসবাসকারী অনেকে আবার স্থানীয় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় সহজে উচ্ছেদও করা যায় না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এ সময়ে দিব্যি বাস করে যাচ্ছে লোকজন। তবে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বাটালি হিল, জিলাপির পাহাড় কিংবা পরির পাহাড়ের পাদদেশ থেকে দু’মাস আগে থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভারিবর্ষণের সময় মাইকিং করে লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উল্লখযোগ্য সংখ্যক লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে এখন খুব বেশি লোকজন বাস করে না। কয়েকদিনের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এতে বাকি পরিবারগুলোও সরে যাবে। আশা করছি, এই মৌসুমে পাহাড় ধসে মৃত্যুর কোন ঘটনা ঘটবে না।

এদিকে নগরীতে ফের জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ার আশংকা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত নগরীতে হালকা থেকে ভারিবর্ষণ হয়। এতে নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনগুলো আটকে যায়। গতকাল তেমন একটা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সবার মনে একটিই প্রশ্ন এবার কি জলাবদ্ধতার বেশি হবে। আর জলাবদ্ধতা বেশি হলেই নগরীতে নেমে আসবে অসহনীয় দুর্ভোগ।

নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নগরের নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত সব জায়গায় পানি জমে যায়। এর মধ্যে আছে চকবাজার, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, ওয়াসা মোড়, ষোলশহর দু’নম্বর গেট, মুরাদপুর, মেহেদিবাগ, বহদ্দারহাট মোড়। বহদ্দারহাট মোড় থেকে মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। সেখানে এমনিতে দিনভর যানজট লেগে থাকে। শুষ্ক মৌসুম বাদ দিয়ে বর্ষার আগ মুহূর্তে সড়ক মেরামত কাজ শুরু করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির সময় সড়ক মেরামত করলে সড়কের অবকাঠামো দুর্বল থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়ার শতভাগ গ্যারান্টি নেই। ড্রেন থেকে নিয়মিত ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এতে বৃষ্টির পানি খালে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের অনেক দায়ভার আছে। করপোরেশন যদি খাল-নালা-নর্দমা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার না করে, তবে অল্পবৃষ্টিতে পানি জমবে। সিটি করপোরেশন খাল-নালায়, ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল দ্রুত মিলবে।

গত ২ মে নগরীর ওয়াসা মোড়ে ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আলী। এসময় ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান এবং সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নেরর অনুমোদন পায় সিডিএ। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সিডিএ’র সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ড্রেনেজ অবকাঠামো সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. আলী জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। নগরীতে মোট ৫৭টি খাল আছে। এর মধ্যে ৩৬টি প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ১৫টি খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ-প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ সার্বিক সংস্কার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে আরও কমপক্ষে সাতটি খালের কাজ শেষ হবে। বাকিগুলোর কাজ পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হতে পারে।

তিনি জানান, ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্টের সবগুলোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। সড়কের পার্শ্ববর্তী ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কারের পাশাপাশি ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। খালের মুখে ৫টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজও একেবারে শেষেরপথে। ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপের মধ্যে ১৩টি স্থাপন করা হয়েছে। খালপাড়ের রাস্তা ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ৫০ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ৫ দশমিক ৫০ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে।