ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন

অভিযুক্তদের চূড়ান্ত বক্তব্য শুনেছে প্রশাসন

অভিযুক্তদের চূড়ান্ত বক্তব্য শুনেছে প্রশাসন

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ফুলপরী খাতুন নামে এক নবীণ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন সুযোগ পেয়েছেন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য শুনল প্রশাসন। এছাড়া লিখিত প্রতিবেদনের বাহিরে অতিরিক্ত কোনো আত্মসমর্থকমূলক কথা থাকলে সেটা উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছে প্রশাসন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তব্য শুনেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ইসলাম ও মোয়াাবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।

অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ও ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ইবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছিল। আমাদের থেকে প্রশাসন পূর্বে কয়েকবার প্রতিবেদন লিখিত নিয়েছে। আজ আবারো জিজ্ঞাসা করছিল কোনো নতুন বা অতিরিক্ত তথ্য যোগ করতে চাই কি না। পরে তেমন কোনো তথ্য আমি দিইনি। অন্যরা দিতে পারে তবে আমার চূড়ান্ত লিখিত প্রতিবেদন দেয়া হয়ে গিয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেছেন কি না, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি বহুবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকে নক দিয়েছি, আমাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কোনো দৃশ্যমান নিরাপত্তা দেয়নি। আমাদের প্রশাসন ভবনের নিচে এনে তারা ছেড়ে দিয়েছে। প্রশাসনের এত উদাসীনতা দেখে খুবই কষ্ট লেগেছে।’ এ বিষয়ে প্রক্টর শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে অভিযুক্ত সবাইকে চিঠি পাঠিয়ে আত্মসমর্থনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যদের ইনডিভিজুয়াল তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি ও জমা দিতে বলেছে প্রশাসন। আমাদের হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে আগামী জুলাই মাসের ১৯ তারিখের মধ্যে এই বিষয়টির ইতি টানতে হবে। এছাড়া এ বিষয়ে আগামী ছুটি ৮ জুলাইয়ের পর মিটিং করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

অন্তরার নিরাপত্তারহীনতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তরা আসার পূর্বেই খোঁজখবর নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। তারপরও আমাদের সহকারী প্রক্টরেরা তাদের যতটুকু পেরেছে খোঁজখবর রেখেছেন। তারা প্রশাসন ভবনের নিচে পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে এসেছেন, পরে গাড়ি নিয়ে টহল দিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সেদিন তার খারাপ ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ফুলপরী। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা মিলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ছাত্র-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে সাময়িক বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত