ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

বরিশালে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী খুলনায়ও এগিয়ে নৌকা

বরিশালে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী খুলনায়ও এগিয়ে নৌকা

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে এগিয়ে রয়েছেন নৌকার প্রার্র্থী। জানা যায়, বরিশাল ১২৬টি কেন্দ্রের ফলাফল গণনা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় বেসরকারি ফলাফল জানানো হয়। নৌকা প্রতীকে আবুল খায়ের ৮৭ হাজার ৭৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ৫৩ হাজার ৪০৮। এর আগে সকাল ৮টা থেকে বরিশাল নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি ভোট কক্ষে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় বিকাল ৪টায়। সকালে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরিশাল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। ভোট শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘চমৎকার পরিবেশ, খুব ভালো ভোট হচ্ছে সব জায়গায়। ইনশাআল্লাহ আমরা আশাবাদী। এ সময় তিনি আরো বলেন, ভোটের ফল যাই হোক, আমি মেনে নেব। হেরে গেলেও বিজয়ী প্রার্থীকে স্বাগত জানাব। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে নগরের রূপাতলী হাউজিংয়ের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম। ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত সময়ে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেখানে মানুষ এবার অন্তত ভোট দেয়ার একটি পরিবেশ পেয়েছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে হাতপাখা সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য না হলে ভোটের ফলাফল মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। যদি প্রশ্নবিদ্ধ ভোট হয়, তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, রিট করব, আন্দোলন করব। সকাল থেকেই পছন্দের নগরপিতা নির্বাচন করতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি ছিল। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দুপুরের দিকে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রের সামনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট। বরিশাল সিটির ১২৬টি ভোটকেন্দ্রে এবারই প্রথম ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। এ সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা চলছিল। এতে নৌকার প্রার্থী বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। রাত ৮ পর্যন্ত ২০১ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে এগিয়ে থাকেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৮১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল হাতপাখা প্রতীকে ৩৮ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়েছেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়।

এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পাঁচজন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের এসএম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ালঘড়ি প্রতীকের এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক।

বরিশাল-খুলনা সিটি করপোরেশনসহ দুই পৌরসভায় আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা ঘটনায় কোনো ধরনের নির্বাচনোত্তর বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সিইসি বলেন, দুই-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখল পরিবেশে ভোট হয়েছে। খুলনায় গড়ে মেয়র পদে প্রায় ৪৫ শতাংশ ও বরিশালে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। আর পৌরসভায় ৫৫ শতাংশ ভোট পড়ার আশা করা হচ্ছে।

ভোটে সন্তুষ্ট নিয়ে সিইসি বলেন, যেটা দেখেছি- আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি। সার্বিকভাবে নির্বাচনটা আজকে হয়েছে (বরিশাল-খুলনা সিটি, কক্সবাজার আড়াইহাজার পৌরসভা) তা বেশ সুশঙ্খল, আন্দমুখর পরিবেশে হয়েছে। গণমাধ্যমসহ সবখানে ইতিবাচক সংবাদ পেয়েছি। দুই-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক।

একটি দলের মেয়র প্রার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাহলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বলা যায় কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রক্তাক্ত এখন সব কিছু তো আপেক্ষিক। উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা যেটা দেখেছি, উনার কিন্তু রক্তক্ষরণ দেখিনি। যতটা শুনেছি উনাকে পেছন থেকে কেউ ঘুষি মেরেছে। উনার বক্তব্যও শুনেছি। উনি বলেছেন, যে ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে। এবং আমরা সঙ্গে সঙ্গে খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি, ভোট কার্যক্রম ওই কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কি-না। আমরা যে খবর পেয়েছি, ভোট কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়নি এবং উনাকে যে আহত করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার এবং যে দায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং দায়-দায়িত্ব নিরুপণ করার পর পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছে এরই মধ্যে। আমরা আরো নির্ভরযোগ্য তথ্য পরবর্তীতে হয়তো পাব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত