কক্সবাজার পৌর নির্বাচন

মেয়র পদে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর জয়

কাউন্সিলর পদে পুরোনোদের জয়জয়কার

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজার পৌরসভার এবারের নির্বাচনকে একটি স্মরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটার, প্রার্থী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কোনো প্রকার অভিযোগ, উত্তেজনা, অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গতকাল সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। আর সেই ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৮১৮ ভোট পেয়ে তিনি বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ পেয়েছেন ২৪ হাজার ৫৭৪ ভোট। ফলে ৪ হাজার ২৪৪ ভোট ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। ভোট গণনা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলের নির্বাচন সমন্বয় কেন্দ্রে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার এসএম শাহাদাত হোসেন বেসরকারি এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফলকে জনতার বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সাধারণ ভোটাররা আন্তরিকভাবে নৌকা প্রতীক ও আমাকে ভালোবেসে নির্বাচিত করেছেন। আমি জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই সঙ্গে ঘোষিত ফলাফলে সংরক্ষিত চারটি নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন, ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শাহেনা আকতার, ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইয়াসমিন আকতার, ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জাহেদা আকতার ও ১০, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নাছিমা আকতার বকুল। এরা চারজনই বর্তমান নারী কাউন্সিলর। ১২টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডের আকতার কামাল, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আমিনুল ইসলাম মুকুল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এহসান হক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহাব উদ্দিন সিকদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওমর সিদ্দিক লালু, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমান সরওয়ার টিপু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রাজবিহারী দাশ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হেলাল উদ্দিন কবির, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সালাউদ্দিন সেতু, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নুর মোহাম্মদ মাঝু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এমএ মঞ্জুর। এর মধ্যে ৩ নম্বর, ৪ নম্বর, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিতরা নতুন। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় থেকে শুরু হওয়া কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলে ৪টা পর্যন্ত, যে ভোটে কোনো প্রার্থী, এজেন্স বা ভোটারদের অভিযোগ ছিল না। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করছে ভোটার আর ভোট দিয়ে ফিরে গেছে ঘরে। ভোটার গ্রহণের নিয়োজিত কর্মকর্তাদেরও ছিল না মাথাব্যথা। কোনো প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালেট ছিনিয়ে সিল মারার আতঙ্কও ছিল না। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৭টি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ ভোটার সারিবদ্ধ হয়ে একে একে কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন আর ভোট প্রদান শেষে কেন্দ্রে ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। যারা ভোট প্রদান করেছেন তাদের কেন্দ্রে থাকা পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেরা কেন্দ্রে থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় ভোট দেন মোহাম্মদ জুনাইদ। তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ অত্যন্ত ধীরগতি। তবে ভোট প্রদানে কোনো প্রকাশ অসুবিধা হচ্ছে না। সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ভোটার ১ হাজার ১৩৭। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কাশেম দুপুর ১২টার দিকে জানিয়েছেন, ৩ ঘণ্টায় ১৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। ভোটারদের আঙুলের চাপ, প্রক্রিয়ার জন্য একটু ধীরগতি হলেও তা দ্রুত করার চেষ্টা করছেন তারা। আল মোস্তফা নুরীয়া মাদ্রাসার প্রিজাইডিং অফিসার রিয়াজ উদ্দিন দুপুর ১টায় জানিয়েছেন, নারীদের আঙুলের চাপে সমস্যা হচ্ছে। এতে ভোটগ্রহণে ধীরগতি হলেও ৫ ঘণ্টা ভোট কাস্টিং ৪৫ শতাংশ হয়েছে। ১নং ওয়ার্ডের ইসলামী রিসার্চ সেন্টার কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ৭৭২ ভোট। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজি কাসেম বলেন, প্রথম সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ২০ শতাংশ ভোট নেয়া হলেও দুপুরে ২টায় এসে তা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। তার কেন্দ্রে ২টা পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি ভোট কাস্টিং হয়েছে। বিকাল ৩টায় কস্তুরাঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোট ৫০ শতাংশ। এখনো ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন। এসব ভোটার ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা চিন্তাহীন ভোটদের আয়োজন। এখানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১২টি ওয়ার্ডে তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫ ম্যাজিস্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১২টি র‌্যাব টিম ও ১ হাজার ২০০ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। আর ৪৩টি কেন্দ্রে ২৪৫টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার এসএম শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকে কোনো প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। হয়নি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলেও কেন্দ্রে থাকলে অবশ্যই ভোট নেয়া হবে। এরপর ভোট গণনা শুরু হবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ করা হয়। কোথাও গোলযোগের খবর নেই। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ ধরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৯৫ হাজার ৩৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫০ হাজার ১৮৪ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ২০২ জন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মূল লড়াই রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী (নৌকা) ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ (নারকেল গাছ)। মাঠে অন্য তিন মেয়র প্রার্থী হলেন, জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট), জোসনা হক (মোবাইল ফোন) ও মো. জাহেদুর রহমান (হাতপাখা)। জোসনা হক নারিকেল প্রতীক মাসেদুল হক রাসেদের স্ত্রী। এছাড়া ১২টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং চারটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।