ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের ঝুঁকি কমছে

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের ঝুঁকি কমছে

হালকা থেকে ভারি বৃষ্টির প্রভাবে কাপ্তাই হ্রদে কিছুটা বেড়েছে পানি। সেই সঙ্গে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের ঝুঁকিও কমছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরুর আশা করছে পিডিবির সংশ্লিষ্টরা। সক্ষমতার পুরোমাত্রায় উৎপাদন হলে একটি কেন্দ্র থেকে মিলবে ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে যায়। এজন্য ২৪২ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে কম। মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। যা সক্ষমতার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সামনে বর্ষা মৌসুম আসন্ন। এতে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপর কাপ্তাই হ্রাদে বাড়তে পারে পানি।

পিডিবির সংশ্লিষ্টরা জানান, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে সবকটি সচল থাকার পরেও পানি সংকটের কারণে একসঙ্গে চালু করা যাচ্ছে না। গেল এক সপ্তাহ ধরে চালু ছিল ৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এক নম্বর ইউনিটটি। এতে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, কাপ্তাই হ্রদে পুরো মাত্রায় পানি থাকলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রও পুরোদমে সচল থাকে। এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস পানির স্তর হ্রদে অনেক কমে গেছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে এখন আমরা আশাবাদী। বৃষ্টিপাত বাড়ছে। হ্রদে পানির স্তর বাড়লে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট সচল করা যাবে।

গেল সপ্তাহের টানা চার দিন পানির স্তর ছিল কম। রুলকার্ভ (হ্রদের পানির পরিমাপক) অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা ছিল ৭২ দশমিক ৩৭ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। অথচ এ সময়ে পানির উচ্চতা থাকার কথা ছিল ৭৭ দশমিক ৮২ এমএসএল। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, হ্রদে কম পানি থাকলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেশিরভাগ ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়। বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলে দ্রুত কাপ্তাই হ্রদের পানি শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে একটি ইউনিট সচল রেখে অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টি খুবই জরুরি। তবে এখন ধীরে ধীরে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে। এজন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়বে।

এদিকে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রত্যাশিত পানি ছাড়ছে না পিডিবি। এজন্য কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি। এ কারণে চট্টগ্রাম ওয়াসার দুটি শোধনাগারে পানি পরিশোধনের পরও লবণাক্ত পানি যাচ্ছে নগরবাসীর কাছে। এ কারণে লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে উঠেছে ওয়াসার পানি। মুখে নেয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমে যায়। এ কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে। কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। দৈনিক ৯ কোটি করে দুটি ১৮ কোটি লিটার উৎপাদন সক্ষমতার পানি সরবরাহ প্রকল্প জোয়ারের সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকায় আশা করছি সঙ্কট তেমন থাকবে না। জোয়ার ছাড়াও পানিতে লবণাক্ত পানি মিশে যাওয়ার পরিমাণও কমবে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানায়, কোনো জ্বালানি ছাড়াই শুধু হ্রদের পানি ব্যবহার করে দেশে সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। এরমধ্যে এক নম্বর ইউনিটে ৪৬ মেগাওয়াট, দুই নম্বর ইউনিটে ৪৬ মেগাওয়াট, তিন নম্বর ইউনিটে ৫০ মেগাওয়াট, চার নম্বর ইউনিটে ৫০ মেগাওয়াট এবং পাঁচ নম্বর ইউনিটে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।

প্রসঙ্গত ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ২৫৬ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিশাল জলাধার সৃষ্টি হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ মানবসৃষ্ট হ্রদ। এই হ্রদ থেকে প্রচুর মিঠাপানির মাছও পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত