ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিনি কি ‘ইন্তেকাল’ করেছেন

আবারো বিতর্কে জড়ালেন সিইসি

‘ইন্তেকালের’ কথা শুনে ফয়জুল করীম বললেন ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’
আবারো বিতর্কে জড়ালেন সিইসি

আবারো বিতর্কে জড়ালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম কি ‘ইন্তেকাল’ করেছেন- এমন বক্তব্য দিয়ে আবারো সমালোচনার মুখে পড়েছেন। গত সোমবার খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সিইসি এসব কথা বলেন। একটি দলের মেয়র প্রার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাহলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বলা যায় কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রক্তাক্ত এখন সব কিছু তো আপেক্ষিক। উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা যেটা দেখেছি, ওনার কিন্তু রক্তক্ষরণ দেখিনি। যতটা শুনেছি ওনাকে পেছন থেকে কেউ ঘুষি মেরেছে। ওনার বক্তব্যও শুনেছি। উনি বলেছেন যে, ভোট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আমাকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং আমরা সঙ্গে সঙ্গে খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি, ভোট কার্যক্রম ওই কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কি না। আমরা যে খবর পেয়েছি, ভোট কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়নি এবং ওনাকে আহত করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং যে দায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করার পর পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছে এরইমধ্যে। আমরা আরো নির্ভরযোগ্য তথ্য পরবর্তীতে হয়তো পাব। তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি, শুনেছি যে হাতপাখার প্রার্থীকে খানিকটা আঘাত করা হয়েছে। সেটা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। আমাদের এখান থেকে বলা হয়েছে যে, নির্বাচন-উত্তর যেন কোনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ যেন করা না হয়। কারণ ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেও অনেক সময় এরকম ঘটনা ঘটে থাকে। সে প্রস্তুতি আমাদের আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে প্রস্তুত আছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। সর্বশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সময়ও বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বর্তমান কমিশন সমালোচনার মুখে পড়ে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সময়কালে কেউ ‘তলোয়ার নিয়ে এলে, তাকে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন সিইসি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হওয়ায় ওইদিনই বিকালে তা প্রত্যাহার করে নেন। পরে অন্য একটি দলের সঙ্গে সংলাপে তলোয়ার প্রসঙ্গ এলে সিইসি ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমাও চান। এর আগে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই মাঠ ছেড়ে না যাওয়া ইস্যুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনেও বিতর্কে জড়ান সিইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠ ছেড়ে না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, মাঠ ছেড়ে চলে এলে হবে না। মাঠে থাকবেন, কষ্ট হবে। এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়তো দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু উনি পালাননি। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রও একটি যুদ্ধ, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যেখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, সেখানে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। একজনের শক্তি দেখে চলে গেলে হবে না। দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সিইসির ওই বক্তব্য নিয়েও বিরূপতা দেখা দিয়েছিল। তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে মৌখিক আলাপে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মানটিটস্কি সিইসির ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘জেলেনস্কির মতো মাঠে থাকার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সিইসি রাশিয়াবিরোধী অবস্থান ব্যক্ত করছেন। ওই সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, এ বক্তব্য সিইসির একান্ত ব্যক্তিগত, বাংলাদেশের অবস্থান নয়। ইভিএমে ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া ইস্যুতে পুরস্কার ঘোষণা নিয়েও দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসের মাথায় বিতর্কে জড়ায় বর্তমান কমিশন। কমিশনার আনিছুর রহমান গত মে মাসের শেষ দিকে মাদারীপুরে এক অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভুল ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাকে উদ্ভট বলে মন্তব্য করেন। তার দাবি, সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার সময় খেই হারিয়ে এমন ঘোষণা দিয়েছেন তার সহকর্মী আনিছুর রহমান। ওই পরিমাণ টাকা দেয়ার সক্ষমতা ইসির নেই বলেও তিনি জানান। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু দল ইভিএমের বিপক্ষে মত দিলেও ইসি জাতীয় নির্বাচনে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সর্বোচ্চ ৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করবে বলে ঘোষণা দেয়। এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম সংগ্রহে আট হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাসের তোড়জোড় শুরু করে। তবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার এ প্রকল্পটি স্থগিত করেছে। ইসি এখন বর্তমানে হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে যতদূর সম্ভব আসনে ভোট করবে বলে জানিয়েছে। এদিকে সিইসি মুখে ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন’ এমন কথা শুনে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বললেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, আস্তাগফিরুল্লাহ, আমি ইন্তেকাল করলে হয়তো ইসির কানে পানি যেত। আমি রক্তাক্ত ও জখম হয়েছি, এতে ইসির আশা পূরণ হয়নি। হয়তো ইন্তেকাল করলে তার আশা পূরণ হতো। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তার ওপর কীভাবে কারা হামলা করেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন ফয়জুল করীম। এর আগে তার বড় ভাই চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিম সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল ও খুলনার ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান এবং রাজশাহী ও সিলেটের ভোট বর্জন করেন। একইসঙ্গে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত