নিবন্ধন অধিদপ্তরে শিগগিরই নিয়োগ : আইনমন্ত্রী

স্থায়ী আইজিআরের অভাবে ঢিমেতালে চলছে কার্যক্রম

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

সরকারের রাজস্ব আয়ের যে কয়েকটি দপ্তর ও অধিদপ্তর রয়েছে, এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিবন্ধন অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশের জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো রয়েছে। আর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর মাধ্যমেই জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন বাবদ প্রত্যেক বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দেয় নিবন্ধন অধিদপ্তর। অথচ দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আয়ের এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। এতে নিবন্ধন অধিদপ্তরের বেশকিছু কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, নিবন্ধন অধিদপ্তরে স্থায়ী আইজিআরের অভাবে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বেড়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির কাজের গতি কমেছে।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধন অধিদপ্তর। ২০২০ সালে জানুয়ারিতে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) পদে যোগদান করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত নম্বর-৬ এর বিশেষ জজ (জেলা জজ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম ঝিনুক। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শহিদুল আলম ঝিনুক অবসরে চলে যান। এরপর নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় আইন ও বিচার বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবকে। বর্তমানে তিনি অধিদপ্তরের রুটিনমাফিক কাজ করছেন। তবে স্থায়ী আইজিআরের অভাবে সারা দেশের জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং, নতুন পরিকল্পনা কিংবা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশের জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব অফিস নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে নিবন্ধন অধিদপ্তর। অথচ প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে স্থায়ী আইজিআর নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে নিবন্ধন অধিদপ্তরের বেশকিছু কাজ স্থবির হয়ে আছে। নিবন্ধন অধিদপ্তরে আইজিআর নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘লোক বাছাইয়ের চেষ্টা করছি। শিগগিরই নিবন্ধন অধিদপ্তরে মহাপরিদর্শক পদে নিয়োগ দেয়া হবে।’ নিবন্ধন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নিবন্ধন অধিদপ্তরের পদটি দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্মসচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম। তিনি যগ্ম-সচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) দায়িত্বে রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার কারণে নিবন্ধন অধিদপ্তরে অধিকাংশ দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। অধিদপ্তরের এসে রুটিনমাফিক কাজ করে মন্ত্রণালয়ে চলে যান। অথচ এ পদই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই পদে পদায়নের জন্য অনেক কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির করেন। পদের অভাবে পদায়ন পাচ্ছেন না বহু মেধাবী জেলা জজ। আর নিবন্ধন অধিদপ্তরের মতো আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ মাসের পর মাস ফাঁকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এ ধরনের নজির আগে কখনো ছিল না। অন্য সময়ে দেখা গেছে, পদ ফাঁকা হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা পূরণ হয়ে গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকার পেছনে কারণ রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিচার মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রণালয়ের খামখেয়ালির জন্য হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, মহাপরিদর্শক পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। এটি পূরণে মন্ত্রণালয় গড়িমসি করছে। বিষয়টি ‘টপ অব দ্য, আইন মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলায় টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি, চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, মহাপরিদর্শক না থাকার সুযোগ নিয়ে যেমন প্রশাসনে গাছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে তেমনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায়ও গাছাড়া ভাবের কারণে নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে ভূমি নিবন্ধনের দায়িত্ব সাব-রেজিস্ট্রারের। আর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়গুলো দেখভাল এবং জমি কেনাবেচা ও জমির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক পদটি অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে চলছে। অথচ নিবন্ধন অধিদপ্তর জনসাধারণকে প্রত্যক্ষভাবে সেবাপ্রদান করে থাকে। এখন পূর্ণ মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক না থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। যে কোনো সংকট সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছেন না। দ্রুত মহাপরিদর্শক নিয়োগ দেয়া না হলে নানামুখী সংকটে পড়বে নিবন্ধন অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, নিবন্ধন বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৭৮১ সালে। ১৭৯৩ সালে বেঙ্গল রেগুলেশনের মাধ্যমে ঢাকায় প্রথম রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯০৮ সালে উপমহাদেশের রেজিস্ট্রেশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণীত হয়। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় নিবন্ধন বিভাগ সুনাম যতটা অর্জন করেছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্জন করেছে দুর্নাম। অভিযোগ আছে, সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে ঘুষ না দিয়ে সচরাচর জমিজমা নিবন্ধন করা সম্ভব নয়। নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, মূলত প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছিল। নতুন কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম বহুলাংশে কমে যাবে। অথচ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলছে, সেই প্রতিষ্ঠানটি চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। নিবন্ধন অধিদপ্তরে মহাপরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন যুগ্ম সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম।