আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

আষাঢ় এলেও বর্ষা এলো না

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে শীতল আবহাওয়ায় প্রকৃতি এক নতুন রূপে সাজে। কিন্তু এবার আষাঢ় এলেও বর্ষার আগমনী বার্তা নেই। বরং ভ্যাপসা গরম, রোদে প্রাণিকূল হাঁপিয়ে উঠছে। যা আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয় জুনে। তবে এবার জুনের অর্ধেক দিন শেষ হলেও ভারি বর্ষণের সুষ্পষ্ট আভাস মিলছে না। আষাঢ়-শ্রাবণের সেই মুষলধারার বৃষ্টি আর ঝরছে না। বৃষ্টির পরিমাণও কমে গেছে। এতটাই কমেছে যে, সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ। ঋতুবৈচিত্র্যে ছয় ঋতুর মধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ দ্বিতীয় ঋতু। নানা কারণে আষাঢ় বা বর্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আবার এসেছে আষাঢ়, আকাশ ছেয়ে’। তাই তো বর্ষার আগমনী গান শোনায় গাঙশালিক। একটানা ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডেকে যায় কোলা ব্যাঙ। আষাঢ় বা বর্ষা এলে নদী-নালা, খাল-বিল জলে টইটুম্বুর হয়ে যায়। মরা নদীতে জোয়ার আসে। বিলের জলে দেখা যায় শাপলার হাসি। নৌকায় চড়ে খাল-বিল পেরিয়ে বহুদূর চলে যাওয়া যায়। ঢেউয়ের তালে তালে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নেচে ওঠে মন। কখনো হঠাৎ আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটা। আকাশ ছাপিয়ে বৃষ্টির ধারা নেমে আসে। বৃষ্টির জলে অবগাহনে মনে অফুরান আনন্দের শিহরণ জেগে ওঠে। ঘরের টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দ শুনতে পাওয়া যায়। জানালা খুলে বিছানায় শুয়ে বৃষ্টির শীতল পরশ অনুভব করা যায়। কিন্তু এবার জুন মাসের অর্ধেক শেষ হলেও বর্ষা আসছে না। মাঝে মাঝে দুয়েকদিন বৃষ্টি হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বরং বৃষ্টি ঝরার কিছুক্ষণ পরে প্রচণ্ড ভ্যাবসা গরম পড়ছে। চৈত্র্যের তীব্র রূপের মতো তাপপ্রবাহ সপ্তাহখানেক ধরে প্রচণ্ড গরমে ভুগিয়েছে মানুষকে। খুব দ্রুত তা কমার আভাস দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর; উল্টো দিচ্ছে বিস্তারের পূর্বাভাস। আর এর মধ্যে বৃষ্টি যে স্বস্তি আনবে, তেমন আভাসও নেই।

গতকাল বুধবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বইছে। আজও সেটি অব্যাহত থাকতে পারে। ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

তিনি আরো জানান, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

তবে থেমে থেমে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম কমেনি। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম হওয়ার কারণে এমন গরম অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমের জন্য জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি এবং বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কম। ঢাকায় বাতাসের বেগ প্রতি ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। এ কারণে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরম লাগছে এবং স্যাঁতসেঁতে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা যা আছে, তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। সাধারণত ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এত গরম লাগার কথা নয়।

বৃষ্টির দেখা মেলেনি, উল্টো বাড়ছে তাপমাত্রা। দিনভর তাপ বিলাচ্ছে সূর্য। সন্ধ্যা নামলেই ভ্যাপসা গরম। আবহাওয়া অধিদপ্তরও দিতে পারছে না বৃষ্টির আগাম সুখবর। ফলে বর্ষাকালের ভরা মৌসুম বৃষ্টিবিহীন পার হওয়ার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। মেঘ-বৃষ্টির আশায় আকাশ পানে চেয়ে দিন কাটছে কৃষকদের। চন্দ্র দাস নামে একজন কৃষক জানান, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন নেই তখন বৃষ্টি হচ্ছে। যখন বৃষ্টির প্রয়োজন হয় তখন কোনো বৃষ্টি নেই। সময়মতো ফসল জমিতে রোপণ করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি না থাকায় বীজতলায় অনেক চারা নষ্টও হয়ে গেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হবে কি না আমরা কৃষকরা এটা ভাবতেই পারছি না।

আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার আগেই টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হয়, কিন্তু এবার আষাঢ় এলেও বৃষ্টির দেখা নেই। শুধু মানুষ নয়, দাবদাহে পুড়ছে মাঠ-ঘাট এবং শস্যও। গত কয়েকদিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে বীজতলার চারাও মরে যাচ্ছে। যার কারণে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষক। অসহনীয় গরমে জনজীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। বাড়ছে নানা রোগের শঙ্কা। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে এরইমধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া, আমাশায়, সর্দি-জ্বরসহ নানা রোগে।