ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দীর্ঘদিন মজুত রাখার জের

চট্টগ্রামের বাজারে পচা পেঁয়াজের ছড়াছড়ি

চট্টগ্রামের বাজারে পচা পেঁয়াজের ছড়াছড়ি

চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে বড় ছোট বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পচা নষ্ট পেঁয়াজের ছড়াছড়ি। দীর্ঘদিন মজুত করে রাখায় পেঁয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকটা পচে যাওয়া অবস্থায় পেঁয়াজগুলো কম দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন পাইকাররা। দোকানিরাই বলছেন, এসব পেঁয়াজ কম দামে কিনে বাছাই করা শুরু করি। এরপর পচা পেঁয়াজ ফেলে দিয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো পেঁয়াজগুলো নিয়ে দোকানে পসরা সাজাই। আড়তদাররা মজুত করে রাখায় পেঁয়াজগুলোর বড় অংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

নগরীর চান্দগাঁও এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, দোকানে রাখা পেঁয়াজগুলো আড়ত থেকে কিনেছি। কেনার সময়ই অনেক নষ্ট পেঁয়াজ পাই। পরে সেসব বাছাই করে ভালো পেঁয়াজগুলো বিক্রয়ের জন্য রেখেছি। এসব পেঁয়াজের আবার অনেকগুলো আধা পচা। তাই ক্রেতাদের অনেকে কম দামেও নিতে চান না। ভালো পেঁয়াজের সঙ্গে পচ পেঁয়াজ মেশানো দেখে অনেক ক্রেতা আরেক দোকানে ছুটে যান।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শুরু থেকে বলেছি পেঁয়াজের দাম হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার একমাত্র কারণ মজুতদারি। মজুত করে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পেঁয়াজগুলো বিক্রি করেছেন। আমাদের মনে হয় শুধু মজুত বললে কম হবে। পেঁয়াজগুলো তারা লুকিয়ে রেখেছিলেন। আমদানির অনুমতির পর তড়িঘড়ি করে লুকিয়ে মজুত করে রাখা পেঁয়াজগুলো বের করলেও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। সেই পেঁয়াজগুলো এখন তারা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে সামনে আবার তারা একই তৎপরতায় যুক্ত হবেন। যার চড়া মাশুল দেবেন সাধারণ ক্রেতারা।

নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গত মঙ্গলবার বাজার করতে আসেন ক্রেতা ইউসুফ হোসেন। তিনি বলেন, এখন কম দামে পেঁয়াজ পাচ্ছি। তবে সেই পেঁয়াজগুলো আধা পচা বলা যায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের পসরা থেকে বেছে বেছে পাল্লায় তুলতে হচ্ছে। এর মধ্যেও খারাপ পেঁয়াজ দিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা। কিছুই করার নেই। এসব পেঁয়াজ মজুতদারদের কারসাজির জন্য যথেষ্ট প্রমাণ। এখনই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এদিকে খাতুনগঞ্জে দোকান-গুদামে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে থেকেই ট্রাকে ট্রাকে ঢুকেছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ রাখার জায়গা মিলছে না আড়তে। দোকানের বাইরে পেঁয়াজের বস্তা রেখেছেন। পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার কারণে গত দুই দিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরো ১০ টাকা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজারে এখন প্রতিদিন অন্তত ১৫ ট্রাক করে পেঁয়াজ প্রবেশ করছে। এখন বতর্মানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত দুই দিনের ব্যবধানের দাম কমেছে ১০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি মজুত থেকে পুরোনো পেঁয়াজও দেদার বিক্রি হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্মারা বলছেন, আমদানি শুরুর পর ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিদিন আসছে আড়তে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তাই দামও এখন আগের চেয়ে নিম্নমুখী। তিনি দাবি করেন কোনো ধরনের মজুতদারিতে ব্যবসায়ীরা যুক্ত নন। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। মজুত করলে ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন।

প্রসঙ্গত গেল এক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। সরকার দেশি পেঁয়াজ উৎপাদকদের সুবিধার জন্য পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেন। এরপর খাতুনগঞ্জসহ সারা দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকানো শুরু হয়। ক্রেতারা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও বিক্রেতাদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এরপর সরকার গেল সপ্তাহে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করে। এরপর থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। পাইকারদের পাশাপাশি খুচরা পর্যায়েও দাম কমতে থাকে।

বিক্রেতারা বরাবরের মতো দাবি করেছেন, দেশে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে। আর ঘাটতির কারণে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। তাদের মতে আমদানির অনুমতি দেয়ায় সরবরাহ বেড়েছে। এজন্য দামও কমে আসছে ধীরে ধীরে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত