আজ পহেলা আষাঢ়

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্যৈষ্ঠের খরতাপের পর ঋতুতে এসেছে আষঢ় মাস। আষাঢ় এনে দিয়েছে বর্ষাকালের প্রথম পর্ব। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। বর্ষার আশীর্বাদে প্রাণ ফিরবে প্রকৃতিতে। ধূসর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। গ্রীষ্মের শেষভাগে তীব্র দাবদাহে পুড়ছিল দেশ; অতিরিক্ত গরমে মানুষের প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আষাঢ়ের বর্ষণ যেন ফুল-ফসল ও জনমানবকে এনে দিবে স্বস্তি। গরমে বৈরী প্রভাব থেকে মুক্ত হবে প্রকৃতি। আষাঢ়কে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে ফুটেছে কদম ফুল। আষাঢ়ে বাংলার প্রকৃতি সাজবে নবরূপে। বর্ষার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে উঠবে পরিবেশ। বর্ষায় খালে-বিলে ফোটে শাপলা-শালুক। বাঙালির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আষাঢ়। আষাঢ় মাসের বৃষ্টির উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে গান-কবিতায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা’।

আষাঢ়ের আগমনকে নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে, কুহু পাপিয়া ময়ূর বোলে, মনের বনের মুকুল খোলে নট-শ্যাম সুন্দর মেঘ পরশে।’

বর্ষার বন্দনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত করতল।’/এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে;/না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’

আষাঢ়ের বর্ষণে পুকুর, দিঘি, খালগুলোও কানায় কানায় ভরে উঠবে। নতুন পানিতে মাছ ধরার ধুম পড়বে। বাংলার কৃষি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। বর্ষার অকৃত্রিম দান কৃষকের সেচের খরচ বাঁচিয়ে দেবে।

আষাঢ় নিয়ে বাঙালির রোমান্টিকতারও কমনি নেই। তাই ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গানে-কবিতায় বাংলার কবিরা করেছেন বর্ষা-বন্দনা। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের কাছে তাই বর্ষা নিয়ে আসে অভিনব ব্যঞ্জনা। বর্ষা সবার কাছে বেশ উপভোগ্য হলেও, এই ঋতুতেই ভাঙে অনেকের সুখের ঘর। বন্যায়, ভারি বর্ষণে, পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যায়। বন্যাকবলিত নিচু এলাকার মানুষ তাই আতঙ্কে পার করে বর্ষা। কখন বন্যায় তলিয়ে যায় ফসল। তারপরও বাঙালি জীবনে বর্ষা এক অনন্য ঋতু। আষাঢ়কে কেন্দ্র করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও থাকছে নানা আয়োজন। সংবাদপত্রগুলোতে আষাঢ় ও বর্ষাকে নিয়ে লেখা হয়েছে একাধিক বিশেষ প্রতিবেদন। ছেপেছে গল্প, কবিতা, ছড়া। যা মানুষের হৃদয় মননের খোড়াক জোগাবে।