তিন হাজার হজযাত্রীর সৌদিযাত্রা অনিশ্চিত

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

হজ ফ্লাইটের শেষ দিকে এসে সৌদি আরব যাত্রা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন প্রায় ৩ হাজার হজযাত্রী। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো তাদের নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য এখনো ভিসার আবেদন না করায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভিসা না করা ১৫ এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিভিন্ন এজেন্সির সামনে হজযাত্রীদের বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। এর বাইরেও কিছু এজেন্সি তাদের হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করেনি। তবে উদ্ভূত জটিলতা কাটিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হজে পাঠানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের পক্ষ থেকে +েচলছে বলে জানা গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস সূত্র মতে, এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনে যাওয়ার কথা। গত ২১ মে থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট চলছে। এরই মধ্যে গত বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৩৮৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭২ হাজার ৯৪৯ জন সহ মোট ৮২ হাজার ৩৩৫ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। অবশ্য এসব হজযাত্রীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ জন মারা গেছেন। আগামী ২৪ জুন সর্বশেষ হজফ্লাইট ঢাকা ত্যাগ করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হজ অফিসের আইটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এখনো ৪ হাজার ৯৪১ জনের ভিসা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভিসা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে ২০ থেকে ২৫টি বেসরকারি এজেন্সির শতাধিক করে হজযাত্রীর ভিসা এখনো আবেদন করা হয়নি। অথচ ফ্লাইট শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগেই সৌদি আরব দূতাবাস থেকে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে বলে আইটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এতে প্রায় ৩ হাজার হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাত্রা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উদ্ভুত সমস্যার যাতে সমাধান হয়, সেজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও আমরা হাব মিলে কাজ করছি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিত হজযাত্রী থাকা সত্ত্বেও ১৫টি হজ এজেন্সি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করেনি। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে ১৩ জুন শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

এজেন্সিগুলো হচ্ছে- ফারুক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, খাদেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ওয়ার্ল্ড লিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আনাস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এভায়ানা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, লিমা ট্রাভেল এজেন্সি, এমএমআর এভিয়েশন, মাবরুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, এন আল-আমিন হজ কাফেলা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, পটুয়াখালী ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস, রিয়েল টাস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, এসএন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, নাবিল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড, আল-আমিন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট এবং আত-তাকওয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। তবে ওই শুনানিতে অংশ না নেয়ায় ১৪ জুন ৬ এজেন্সিকে শোকজ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তিন দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজ পাওয়া এজেন্সিগুলো হচ্ছে- ওয়ার্ল্ড লিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, এভায়ানা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এন আল-আমিন হজ কাফেলা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, এসএন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আল-আমিন ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট এবং আত-তাকওয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।

এদিকে সৌদি আরবে পৌঁছানো হজযাত্রীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ না করা, ঠিকমতো সেবা না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিরগুলোকে এরই মধ্যে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এবার ৬০৩টি বেসরকারি এজেন্সি হজ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

হজযাত্রীদের বিক্ষোভ : পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি পাঠানোর নামে ৫৩৮ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ‘এসএন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামে একটি হজ এজেন্সি উধাওয়ের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুর থানা এলাকার জুরাইনে ওই এজেন্সির সামনে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা।

তাৎক্ষণিকভাবে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, একটি হজ এজেন্সি ৫৩৮ জনের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি বলেন, পাঁচ শতাধিক হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিলেও মাত্র কয়েকজনের ভিসা লাগিয়েছে এজেন্সিটি। সাধারণ হজযাত্রীরা অনেক আশা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা দেয়। তারা যদি প্রতারিত হন তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি আরো বলেন, এজেন্সির মূল মালিক পলাতক রয়েছেন। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে পাওয়া গেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।