ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় বাড়ছে করোনা

চতুর্থ ডোজের পরও নিরাপদ ভাবার কোনো সুযোগ নেই

চতুর্থ ডোজের পরও নিরাপদ ভাবার কোনো সুযোগ নেই

ডেঙ্গুর সঙ্গে ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে এখনও দৈনিক শতাধিক মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গত তিন দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ শেষে বর্তমানে চতুর্থ ডোজ করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম চলছে। টিকা নেয়ার পরেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। তবে চতুর্থ ডোজের পরও নিরাপদ ভাবার কোন সুযোগ নেই। সেজন্য টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা করোনাভাইরাসের চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা করোনা সংক্রমিত হবেন না, এমন ভাবার সুযোগ নেই। এখানে কেউ যদি মনে করেন যে টিকা নেবার কোন দরকারই নেই, কারণ সবাই শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হবেই- তাহলে তা হবে চরম ভুল। টিকা করোনাভাইরাসকে একটি অপেক্ষাকৃত সরল রোগে পরিণত করতে সফল হচ্ছে। যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘরে থেকেই চিকিৎসা করা সম্ভব।

গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টানা কয়েক মাস সংক্রমণ কম থাকার পর দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪১ হাজার ১৩২ জনে। অন্যদিকে, মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৫৫ জন।

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৫টি পরীক্ষাগারে ১৭০৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয় ১৭০৫টি। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সেরে উঠেছেন ৮৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭২৩৮ জনে। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে নেই কোনো আগ্রহ। প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। গত বুধবার একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অথচ মাস্ক না পরে এখনও রাজধানীতে চলাচল করছে নগরবাসী। আর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো ইচ্ছা যেন নেই কারও মধ্যে। এই অবস্থায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। রাজধানীর অফিস, মার্কেট, স্কুল, গণপরিবহন কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। রাজধানীর হোটেলের অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়, আমন্ত্রিত বেশির ভাগ ব্যক্তি মাস্ক পরিধান করেন না। অথচ একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন মাস্ক না পরে। যারাও পরিধান করছে, তারাও ঠিকভাবে ঢাকছে না নাক ও মুখ। থুতনির নিচেই রাখছে মাস্ক।

এছাড়া বাস, ট্রেন, হোটেল, বাজারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবখানে অনীহা। বাসে যত সিট ততো যাত্রী, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সবার মুখে মাস্ক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে সেসব সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বাসে গাদাগাদি যাত্রী, হ্যান্ডস্যানিটাইজার নেই বললেই চলে এবং মাস্ক নেই অনেকের মুখে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টে টিকা কার্ড নিয়ে ঢোকার নির্দেশনা থাকলেও কোথাও তা দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে বাজারে সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিলেও কেউ তা মানছে না।

জানা গেছে, টিকা নেয়ার পরেও করোনা সংক্রামিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মাথাব্যথা, গলায় ঘা, জ্বর-কাশির পাশাপাশি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়া, ক্লান্তি, পেটের সমস্যা, কাশি তো আছেই। করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদেরও সংক্রামিত করতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট। স্বস্তির কথা একটাই, এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা বেশি নয়। তবে ফের মাস্কের ব্যবহার, ভিড় এড়িয়ে চলা, কোভিডবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশে^র বিভিন্ন দেশে মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এরপরও নতুন করে করোনা সংক্রমণের ঢেউ দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা এখনও বিভিন্ন টিকার ওপর নির্ভরতা কমাননি। এসব টিকা বিশ্বে পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত হয়েছে। টিকাগুলো কোভিডের অধিকতর বিপজ্জনক ধরনগুলোর বিরুদ্ধে অনেক ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে। প্রকৃতপক্ষেই টিকাদান কর্মসূচির কখনোই সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধের জন্য ছিল না। করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়লেও তার প্রভাব যেন কম ক্ষতিকর হয়, তা নিশ্চিত করা।

করোনা প্রতিরোধে প্রথম কারণটা খুবই সহজ। টিকা নেওয়ার পর সুরক্ষার মাত্রা কমে এসেছে। এই মাত্রা কতটা কমবে- তা ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বয়সের ওপর নির্ভর করে। এর ফলে তৃতীয় ডোজের প্রয়োাজনীয়তা দেখা যায় -যারা বয়স্ক এবং যাদের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, টিকা নিলে করোনা প্রতিরোধ হবে এমন নয়, তবে যারা টিকা নেবেন তাদের শরীরে করোনার তীব্রতা কম হয়। করোনার টিকা নেয়ার ফলে প্রথম দিকের রোগীদের তুলনায় এখন কার রোগীদের করোনার তীব্রতা কমেছে। এভাবেই ধীরে ধীরে করোনার তীব্রতা কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা প্রতিরোধে একক টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে যতদিন পর্যন্ত একক টিকা আবিষ্কার হয়নি, ততদিন পর্যন্ত এভাবেই টিকা নিতে হবে। টিকা গ্রহণে মানুষের শরীরে করোনার তীব্রতা কমবে। আর সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত