চট্টগ্রামের ৯ হাটে মঙ্গলবার থেকে বসবে কোরবানির পশুর বাজার

শর্ত লঙ্ঘন করলে বাতিল হবে ইজারা

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন ও তামিম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে এবার কোরবানির বাজারে প্রচুর দেশি গবাদিপশু নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব পশু সবই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। বিক্রেতারা জানান, এবার পশুর কোনো সংকট হবে না। দরকার না হলেও মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদিপশু। এ অবস্থায় ভারতীয় গবাদিপশুর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ক্রেতারা এখনই আঁচ করতে পারছেন পশুর দাম চড়া হবে কি-না। আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর বাজার চালু না হলেও সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে বিক্রেতারা বেশ চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। এতে এবার দাম বাড়বে এমন শঙ্কা কাজ করছে ক্রেতাদের মনে। তবে বিক্রেতারা ক্রেতাদের সব ধরনের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, শেষ মুহূর্তে কোনো ব্যাপারি দাম ধরে রাখবেন না। তাতে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনতে পারবেন ক্রেতারা। আগামী ২০ জুন থেকে চট্টগ্রামের অনুমোদিত ৯টি হাটে কোরবানির পশু বিকিকিনি শুরু হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০টি গবাদিপশু মজুত আছে। চাহিদা কিছুটা বেশি। তারপরও শেষ মুহূর্তে খুব বেশি ঘাটতি থাকবে না।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গতবার কোরবানির ঈদে গবাদিপশুর চাহিদা ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার। ওই বছর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও খামারে কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। চলতি বছর কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় ১৫ উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে খামারে মজুদ থাকা গবাদি পশুর মধ্যে কোরবানিযোগ্য ষাঁড় রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২১১টি, বলদ ১ লাখ ৪০ হাজার ৩১০টি এবং গাভী রয়েছে ৩৭ হাজার ৮০৪টি। মোট গরুর সংখ্যা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি। মহিষ রয়েছে ৭১ হাজার ৩৩৩টি। গরু এবং মহিষ মিলে মোট কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮টি। এছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। যার মধ্যে ছাগল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি এবং ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৬২টি রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ২৩টির স্থলে ৯টি পশুর হাটকে অনুমোদন দিয়েছেন। এসব বাজার বা হাটেই ২০ জুন থেকে জমে উঠবে কোরবানির পশুর বাজার। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, যানজটসহ নিরাপত্তার নানা দিক চিন্তা করে চসিকের প্রস্তাবিত সব পশুর হাটকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে চসিকের প্রস্তাবিত হাট বা বাজার থেকে অর্ধেকের কম বাজারকে। তবে পশুর হাটে লেনদেন ক্যাশলেস করার উদ্যোগ এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এতে লেনদেন নিয়ে ঝুঁকি রয়েই গেছে।

চসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে ৯টি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট বসানোতে পারবে। অর্থাৎ ৯টি বাজারের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ অনুমতি দেয়। এতে প্রধান সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরত্বে হাট বসানোসহ ১৪টি শর্তও দেয়া হয়। এর আগে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে গত ১১ মে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে চসিক। অনুমতি পাওয়ার পর বাজারগুলোতে ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে চসিক।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাটগুলোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়া হাটগুলোর মধ্যে চারটিই ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত। হাটগুলো হচ্ছে খেঁজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ টি কে গ্রুপের খালি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ। বাকি হাটগুলো হচ্ছে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট ১ কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ। এদিকে অনুমতি পাওয়ার পর পশুর হাটগুলোতে ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। চসিকের এস্টেট শাখা থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত দরপত্র ফরম সংগ্রহ করা যাবে। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন কাল রোববার। ওইদিনই দরপত্র বাক্স খোলা হবে।

অস্থায়ী হাটগুলোর বাইরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় ৩টি স্থায়ী পশুর হাট আছে নগরে। এগুলো হচ্ছে, সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তরপাড় ছাগলের বাজার। সাগরিকা ও পোস্তারপাড়ে ইাজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিবিরহাটে দুইবার দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। বর্তমানে সেখানে খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে চসিক। চাঁদ দেখা সাপেক্ষ আগামী ২০ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত স্থায়ী-অস্থায়ী সবগুলো হাটে প্রতিদিন পশু বিকিকিনি হবে।

হাট বসানোর ১৪ শর্তের মধ্যে আছে অস্থায়ী পশুর হাটবাজার প্রধান সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনকস্থানে বসাতে হবে। যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কের যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি না হয়। পশুর হাটের মাঠের চৌহদ্দির বাইরে এবং রাস্তায় কোনো পশু রাখা যাবে না বা খুঁটি স্থাপন করা যাবে না। সকল পশুর হাটে পশুর সুস্থতা যাচাই করার জন্য ভেটেরিনারি চিকিৎসক অথবা সার্জন-এর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাস্তায় পশু পরিবহনের সময় ইজারাদার কিংবা তার মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক কোনো পশু পরিবহনকারী গাড়ির পথ পরিবর্তন কিংবা নিজস্ব হাটে পশু নিতে বাধ্য করতে পারবে না। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের একমুখী চলাচল থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রবেশপথ ও বহির্গমনের পথ পৃথক থাকতে হবে। এছাড়া পশুরহাটে ইজারাদারগণের নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে হবে। পশুরহাটে গুরুতপূর্ণ স্থানে ইজারাদার কর্তৃক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। জালনোট শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন স্থাপন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। কোনো প্রকার চাঁদা আদায় এবং ক্রেতা-বিক্রেতাকে হয়রানি করা যাবে না। হাট পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসকের মনোনীত কর্মকর্তাকে চসিক কর্তৃপক্ষ ও ইজারাদার সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ইজারা অর্থের ২০ শতাংশ অর্থ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ইজারা প্রদানের সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা করতে হবে। এছাড়া অস্থায়ী পশুর হাট বা বাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অন্য কোনো কারণে বা শর্তাদি লঙ্ঘনের করলে অনুমোদিত হাটবাজার যে কোনো সময় অনুমতি বাতিল করতে পারবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়।