জাপায় ফের দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব

দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দলীয় নেতাকর্মী সুযোগ নিতে পারে অন্যরা

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভাবি রওশন এরশাদ ও দেবর জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। তারা আলাদা আলাদা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় দ্বন্দ্ব বেড়েছে। এতে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে স্বাভাবিক কারণে জাপার সেই স্থান পূরণ করার সুযোগ আসতে পারে। সম্ভাবনাময় দল হিসেবে জাপার মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়লে দলটি দুর্বল হয়ে পরতে পারে। ফলে সাধারণ নেতাকর্মীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টিরও আশংকা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জাপা নেতারা সিদ্ধান্তহীনতার মুখে পড়বেন আর এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে।

মাঝে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের অসুস্থতার কারণে দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। তবে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে নিজেকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন রওশন এরশাদ। নিজের দলীয় বলয় শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে দলের মধ্যে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রয়েছেন দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। এই নির্বাচনে হঠাৎ করেই লাঙল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মো. মামুনুর রশিদ ওরফে কাজী মামুনের নাম দেন রওশন এরশাদ। গত ১৪ জুন রওশন এরশাদের কাছ থেকে মনোনয়ন পেয়ে তা নির্বাচন কমিশনে জমাও দিয়েছেন কাজী মামুন।

রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে মো. মামুনুর রশিদ যখন মনোনয়নপত্র জমা দেন, তখন ঢাকা-১৭ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে লাঙলের প্রার্থী হিসেবে দুজনের নাম ঘোষণা করেন জিএম কাদের। তিনি ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমান ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে মো. সামসুল আলমকে মনোনয়ন দেন। দুই নেতার পক্ষ থেকে দুজনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও দুইজনই অনড় তাদের প্রার্থীর জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি যাতে হতে না পারে, সেজন্য রওশনপন্থিরা আগেভাবেই ছুটে গেছেন নির্বাচন কমিশনে।

জিএম কাদেরপন্থি হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনে রওশন এরশাদের দেয়া প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেয়া হয়েছে বিরোধী দলীয় নেতার প্যাডে। কিন্তু এটা দলীয় প্যাডে দেয়ার কথা। আবার প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য একটা মনোনয়ন বোর্ড আছে। তারা মিলে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরে চূড়ান্ত করেছে। আর তার (রওশন এরশাদ) প্রার্থী নিজে নিজে ঠিক করেছেন। এই নেতা আরও বলেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক দলের কাউকে পদোন্নতি, বহিষ্কার, মনোনয়ন কিছুই দিতে পারেন না। তার অধিকারও নেই। তাই এটা নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই।

যদিও রওশনপন্থিদের প্রার্থী দেয়ার নেপথ্যে সরকারের ইন্ধন আছে এমন ধারণাও করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে রওশন এরশাদ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও জিএম কাদের এখনও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন। তাই জিএম কাদেরের অংশকে কিছুটা চাপে রাখার কৌশল হিসেবে প্রার্থিতা নিয়ে সমস্যা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন জাপা নেতারা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি মনোনয়ন দিতে পারেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। পার্টির চেয়ারম্যান যদি দীর্ঘদিনের জন্য অসুস্থ থাকেন অথবা দেশের বাইরে থাকেন, সে ক্ষেত্রে মহাসচিব চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

এ বিষয়ে পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এর আগেও রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে তারা (রওশন গ্রুপ) দুজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু ইসি তাদের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে। জাতীয় পার্টির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বিধান অনুযায়ী অন্য কেউ মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে শেষ হওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিনকে মেয়রপদে প্রার্থী করেন জিএম কাদের। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে তিনি মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার ৩৬২টি।

অন্যদিকে গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে জাপার প্রার্থী উল্লেখযোগ্য ভোটও পাননি। বরিশালের প্রার্থী ইকবাল হোসেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট পেয়ে হয়েছেন চতুর্থ। আর খুলনায় মো. শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন মাত্র ১৮ হাজার ৭৮ ভোট।

এরশাদপন্থি নেতাদের দাবি, জিএম কাদেরের দেয়া প্রার্থীরা ভোটে সুবিধা করতে না পারায় তারা যোগ্য লোককে ঢাকায় প্রার্থী করেছেন। তবে চেয়ারম্যানপন্থি একজন কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, ভোটের পরিবেশ ভালো হলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে তাদের প্রার্থী আরও বেশি ভোট পেতেন।