ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ড

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রিপন নাথ ঘোষ গ্রেপ্তার

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রিপন নাথ ঘোষ গ্রেপ্তার

২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রিপন নাথ ঘোষকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্নসহ অজ্ঞাত এক যুবককে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে জানা যায় যে, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য এবং তার নাম কনস্টেবল বাদল মিয়া। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল রিপনকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে রিপন নাথ ঘোষসহ মোট ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর র‌্যাব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রিপন নাথ ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে মাদকসহ বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত ৯টি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।

রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১২ সালে ৯ নভেম্বর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এর কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে রিপন নাথ ও তার এক সহযোগী মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। কনস্টেবল বাদল ওই আভিযানিক দলের সদস্য ছিল। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারের পেছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে তারা সন্দেহ করে। নির্বিঘ্নে মাদক কারবার পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগিদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রিপন বিভিন্ন সময়ে রেন্ট-এ কারের প্রাইভেট কার চালানোর সুবাধে তার বিভিন্ন রেন্ট-এ কারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রিপন ২০১৩ সালের গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রেন্ট-এ কার থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া বাকি সদস্যদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগ গোলচত্বর এলাকায় যায়। বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করায় পূর্ব পরিচিত হওয়ায় কনস্টেবল বাদলকে কৌশলে ডেকে আনার জন্য বিশ্বজিৎকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেট কারে উঠায়। তারা কনস্টেবল বাদলকে নিয়ে প্রাইভেট কারে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে এবং তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তারা রাজধানীর মতিঝিল কালভার্ড সংলগ্ন নির্জন এলাকায় এসে রিপন নাথ ও তার অন্যান্য সহযোগিরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে কনস্টেবল বাদলকে হত্যা করে। পরবর্তীতে গুম করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে কনস্টেবল বাদলের মরদেহ ফেলে দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে তারা পালিয়ে যায়। রিপন মতিঝিল এলাকার চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে কনস্টেবল বাদল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলে ওই মামলার বিচারকার্য চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং কিছুদিন পর পর বাসা পরিবর্তন করত বলে জানা যায়। কখনো সে স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস করত না এবং মাঝে মধ্যে গোপনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করত। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে দিনের বেলা টাঙ্গাইল-রংপুর রুটে বিভিন্ন বাসের হেলপারের কাজ করত। এছাড়াও সে ওই এলাকায় বাসের হেলপারির আড়ালে রাতের বেলা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করত। আত্মগোপনে থেকে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য সে বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সিম ব্যবহার করত। সে ২০১৩ সালের আগেও বেশ কয়েকবার মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে। সর্বশেষ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হতে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত