দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নতুন মুখ খুঁজছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে ডামাডোল বাজতে শুরু করেছে রাজপথে। নিরপেক্ষ সরকারে অধিনে নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালন করে রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ইসলামি দল ও বাম সংগঠনগুলো। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ওপর। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসা নীতির ঘোষণা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। এদিকে সংবিধানের আলোকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোটযুদ্ধের ‘প্রস্তুতি’ নেয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলটির নেতারা। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে ক্ষমতাসীনরা। বিতর্কিত ও জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় থাকা এমপিদের আসনে সৎ-দক্ষ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন নতুন মুখ খুঁজছে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচনে জয় লাভ করতে সংসদীয় আসনগুলোতে কষ্টি পাথরে যাচাই-বাছাই করে প্রার্থী দেয়া চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল।

জানা গেছে, সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থী বাছাইয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দলীয় প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রতিবেদনে সমালোচিত এমপিদের আমলনামা ঠাঁই পেয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে এমপিদের অনেকের জনপ্রিয়তায় ধ্বংস নামার চিত্র। যেসব এমপি নিজ নির্বাচনি এলাকায় জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা ও ব্যক্তিস্বার্থে সিন্ডিকেট করেছেন, তালিকায় উঠে এসেছে তাদের নাম। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে যারা জমি দখল, টিআর-কাবিখা প্রকল্প লুটপাট, টেন্ডারবাজি ও কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেছেন তাদের এক রকম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া মাঠ জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়নের একটি খসড়া তালিকাও প্রস্তুত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সাধারণ মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে, এমন প্রার্থীরা জায়গা পেয়েছেন সেখানে। বিতর্কিত এমপিদের শূন্যতা পূরণে অনেক ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়েছেন। দলের অনেকে মনে করেন, এসব নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচনি ফল ভালো হবে। তবে নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল একেবারে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বেশ কিছু আসনে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দিয়ে বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়াতেও প্রার্থী পরিবর্তন করবে দলটি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতেই এ পরিবর্তন আনবে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়, যে কোনো নির্বাচনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে যারা সংসদে আছেন, কিন্তু বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন তারা বাদ পড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। আর যার গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি, নৌকাকে বিজয়ী করতে সক্ষম হবেন, তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচন পর্যন্ত দলকে আরো সুসংগঠিত করে দলের পরিধি বাড়ানো হবে। প্রান্তিক মানুষের কাছে যাওয়া এবং সদস্য পদ নবায়ন করা হবে। নতুন সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচি রয়েছে। তরুণ ভোটারদের নৌকার পক্ষে আকৃষ্ট করা, নারীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করা এবং রাজনীতি ও ভোটে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে অবগত করে যাচ্ছি। এছাড়া রয়েছে আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মিটানো। মনোনয়ন প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনায় আনা হয়। দলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হয়, যাদের জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, দলের সঙ্গে কাজ করছেন, দলের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, যাদের সাহস রয়েছে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়ে দলের বিভিন্ন বৈঠকে শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। অপকর্মে জড়িত হয়ে দলের জন্য বিতর্ক কুড়িয়েছেন, এমন নেতারা আর কখনো দলের মনোনয়ন পাবেন না। এমনকি বিতর্কিত পরিবারের কোনো সদস্যকেও দলীয় প্রার্থী করা হবে না। ফলে জনপ্রিয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা উজ্জ্বল।