ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু আতঙ্ক

ফের চারজনের মৃত্যু

ফের চারজনের মৃত্যু

রাজধানীসহ সারা দেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বাড়ির আঙিনা, ভবনের ছাদ, ফুলের টপ ও ক্যান-প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি এডিসের প্রজনন স্থল। আর এডিস মশার কামড়ে মরছে মানুষ। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

আষাঢ় মাসে বৃষ্টি নামার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এখনো দৈনিক চার শতাধিক কাছাকাছি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এডিসের প্রকোপ বাড়লেও মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কাজকর্মে গাছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চলতি বছরের সর্বোচ্চ ৪৭৭ জন। এ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ১ হাজার ১৩৮ জনে। এ সময়ে ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪০২ জন ও ঢাকার বাইরের ৭৫ জন। চলতি বছরের ১ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৬০৩ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭৫ জন। ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৮ জন। অন্যদিকে, এ সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৩২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২ হাজার ৬৩৭ এবং ঢাকার বাইরে ৭৯৫ জন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন ৩৩ জন। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সেপ্টেম্বরে একাধিক সভায় বলেছিলেন, চলতি মৌসুমে ডিএসসিসিতে ডেঙ্গু পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে ডেঙ্গুর উৎসগুলো ধ্বংসের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, যার ফলে এডিশ মশার উপদ্রব থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষা করতে পেরেছি। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এডিস মশা নির্মূলে সরকারি-বেসরকারি, এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিগত বছরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মৌসুমে এডিসের ব্যাপক প্রভাব দেখা যেত, এবারও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এলো না। এখন মনে হচ্ছে, সারা বছরই কিছু না কিছু ডেঙ্গু রোগী থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এডিস মশা নির্মূলে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে একই দিনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। এতে কিছুটা হলেও এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যাবে। যতদিন পর্যন্ত একযোগে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম না হবে, ততদিন এডিস মশা ডেঙ্গু ছড়াতে থাকবে।’ তবে মশা নিয়ন্ত্রণকাজে ভাটা পড়েনি বলে দাবি করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্বের বেশকিছু দেশে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ।

তবে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি কাছাকাছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো আছে। অন্যদিকে ডিএসসিসি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মশা নিধনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করছে। এছাড়াও যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, সেই সব এলাকায় সাথে সাথে মশার ওষুধ ছিঁটানো হচ্ছে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু সারা দেশে মশা নিয়ন্ত্রণে এই মন্ত্রণালয় এখনো মাঠে নামেনি। মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। সারা বছর দেশব্যাপী মশকনিধন নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছে সরকার। কোন কোন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর এই উদ্যোগে যুক্ত হবে, তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। রাজধানীতে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু ও আক্রান্ত দুটোই বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে বলা হচ্ছে, মানুষের সচেতনতা ছাড়া এডিস মশা নির্মূল করা সম্ভব নয়। ‘ডিএনসিসিতে মশা নিধনে সচেতনতার পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে লার্ভিসাইড স্প্রে ও এডাল্টিসাইড ফগার মেশিনে ওষুধ ছিঁটিয়ে এডিস মশা নির্মূল করা যাবে না। কারণ, এডিস যে মশা ঘরে জন্মায়, আবার সেই ঘরের মানুষকেই কামড়ায়। সে জন্য মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর পাশাপাশি সন্তানদের ফুল সার্ট ও প্যান্ট পরিধান করতে হবে। এতে মশা কম কামড়ায় বলে জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা।’

উল্লেখ, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত