ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজশাহী-সিলেটে হাতপাখার পিছুটান

আওয়ামী লীগের এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাপা

আওয়ামী লীগের এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাপা

বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে এ দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সহজে জয়লাভ করতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মুখেও আওয়ামী লীগের বাইরে কয়েকটি দলের অংশগ্রহণে সিটি নির্বাচন যতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল, হাত পাখার প্রার্থীরা পিছুটান দেয়ায় তা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়ে গেল। রাজশাহী ও সিলেটের নির্বাচন এখন অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়ল। আগামী ২১ জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। বরিশাল ও খুলনার মতো এই দুই সিটিতেও ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের বাইরে জাপা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। সিলেটে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমরা এখনো ভোট পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছি। একটি জিনিস আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা শাহজালালের মাটি, শাহপরানের মাটি এখানে কোনো কারচুপি করা চলবে না। ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। অন্যদিকে, রাজশাহীতে দলটির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন নির্বাচন নিয়ে নিজের হতাশার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরাও মনে করেছিলাম একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বরিশালের ঘটনার পর সুন্দর-সুষ্ঠু নির্বাচনে আশা আমরা আর করি না। অবশ্য তাদের এই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা। সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বরিশালে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটা ক্লিন ও সুষ্ঠু হয়েছে। কঠোর অবস্থার মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। তারপরও তাদের (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) প্রার্থী জিততে পারে নি। সিলেটে তাদের প্রার্থীর কী অবস্থা, এটাও আপনারা জানেন।

এদিকে পাঁচ সিটির নির্বাচনে একমাত্র বরিশালেই কিছুটা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। সেখানে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম মেয়র প্রার্থী ছিলেন। গত সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট চলার সময় ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় দলটি। তারা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় বিক্ষোভ করে। ইসলামী আন্দোলন বাকি দুটি সিটি সিলেট ও রাজশাহীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যখন দুই বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সব পর্যায়ের নির্বাচন বর্জন করে আসছে, তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলীয় প্রতীক হাতপাখা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছিল। এখন এই দলও সিটি নির্বাচন বর্জন করল। ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তারা আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার এই বক্তব্যে বরিশালের নির্বাচন কেন্দ্র করে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানেরর পরিবর্তনের বার্তা এল। বরিশাল ছাড়া অন্য সিটিগুলোর নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি প্রার্থী দেয়। কিন্তু গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হন। পরে দুটি সিটির নির্বাচনে খুলনায় ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু সেখানে তাদের অবস্থান শক্ত না হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়নি। বরিশালেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর অবস্থানের কারণে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির বয়কটের কারণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক থাকে না, সেটি স্বীকার করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অনেকে। সে কারণে তারা ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন বর্জনের বিষয়কে গুরুত্ব দিতে চান না। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বড় দল না থাকায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে না। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে ইসলামী আন্দোলনের মতো দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার রাজনৈতিক শক্তি নেই। ফলে ইসলামী আন্দোলন সিটি নির্বাচনে থাকা না থাকার বিষয় কোনো গুরুত্ব বহন করে না বলে তিনি মনে করেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনর রাশেদা বলেন, সিটি নির্বাচন ঘিরে সতর্ক ও অনড় অবস্থানে রয়েছে কমিশন। কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজশাহীতে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা আমরা পাইনি। প্রার্থীদের আরচণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। দুই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, কোনো প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি ভাঙলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এমনকি তার প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত