ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মেরামতকাজ

৩২৩৩ সরকারি প্রাথমিক স্কুলে দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ

* ৩০ জুনের মধ্যেই বরাদ্দের টাকা খরচের নির্দেশনা * ‘অধিকাংশ স্কুলের চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম’
৩২৩৩ সরকারি প্রাথমিক স্কুলে দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ

চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ৩ হাজার ২৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ১৩টি শর্ত পালন করে ৩০ জুনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট মেরামত কাজ বাবদ বরাদ্দকৃত টাকা খরচের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১২ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সই করা এক পত্রে এ নির্দেশনার কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মেরামত কাজের জন্য বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরোনো ও নব জাতীয়করণকৃত স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলের ভবনগুলোতে নানা সমস্যা বিরাজমান। তাই সংশ্লিষ্ট মেরামত কাজের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম এবং এতে কিছু মেরামত হলেও অনেক সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বরাদ্দ আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন বিভিন্ন স্কুল সংশ্লিষ্টরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্ত স্কুলগুলোকে যেসব শর্ত প্রতিপালনপূর্বক মেরামত কাজ সম্পাদন করতে হবে, তা হলো-মাইনর মেরামত কার্যক্রম বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে; কাজ শুরুর আগে অবশ্যই উপজেলা প্রকৌশলী কর্তৃক মেরামত কাজের প্রাক্কলন প্রস্তুত করে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নিয়ে মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন।

বরাদ্দকৃত অর্থে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যেসব ক্ষেত্রে মেরামত কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে- ক. বিদ্যালয় ভবন, ওয়াশব্লক এবং টয়লেটের ক্ষতিগ্রস্ত প্লাস্টার মেরামত; খ. দরজা, জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার, কলাপসিবল গেট ইত্যাদি মেরামত; গ. ছাদের সিলিং/আন্তর মেরামত; ঘ. ভবনের ওয়াল, কলাম, বিম এবং ছাদের ফাটল মেরামত; ঙ. বিদ্যালয় ভবনের দরজা, জানালা রংকরণ; চ. টাইলস (যদি থাকে), সিঁড়ির রেলিং, বিদ্যালয়ের গেট এবং ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত; ছ. ব্ল্যাক বোর্ড প্লাস্টারকরণ এবং রংকরণ; জ. টয়লেটের পাইপ, ড্রেন, বেসিন, কমোড, প্যান ইত্যাদি মেরামত/প্রতিস্থাপন; ঝ. টিউবওয়েলের প্লাটফর্ম মেরামত এবং টিউবওয়েলের যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন; ঞ. বিদ্যালয় ভবনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা (সুইচ, ওয়্যারিং, ফ্যান ইত্যাদি) মেরামত; ট. বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাটকরণ; ঠ. বিদ্যালয় ভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো মেরামত এবং ড. এছাড়াও বিদ্যালয়ের চাহিদাভিত্তিক অন্যান্য মেরামত।

মেরামতের জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে তা মেরামতের আগে ছবি/ভিডিও করতে হবে এবং মেরামতের পর ছবি/ভিডিও করে রাখতে হবে এবং রেজিস্ট্রি করে সংরক্ষণ করতে হবে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি বিদ্যালয়ে কোন কোন খাতে মেরামত প্রয়োজন তার তালিকা প্রস্তুত করে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট জমা দিবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাদ্দ প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের মেরামতের তালিকা সংগ্রহপূর্বক একত্রে প্রাক্কলন প্রস্তাব তৈরির জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) নিকট প্রেরণ করবেন। উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্তৃক প্রাক্কলন প্রস্তাব প্রস্তুতপূর্বক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রাক্কলন প্রস্তাব মহানগর/উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটিতে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে মেরামতের প্রয়োজন না থাকলে অথবা রাজস্ব খাত থেকে বর্তমান অর্থবছরে বিদ্যালয়ে মেরামত বাবদ বরাদ্দ পেয়ে থাকলে অথবা এলজিইডি কর্তৃক মেজর মেরামতের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বরাদ্দকৃত এ অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এক্ষেত্রে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ সমর্পণ করতে হবে।

নিরীক্ষার (অডিট) জন্য বিল/ভাউচার ও প্রাক্কলনের কপি উপজেলা শিক্ষা অফিসে সংরক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উক্ত বিল ভাউচার ও প্রাক্কলনের এক কপি নিজ বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করবেন। বিদ্যালয় মেরামতের প্রাক্কলন উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে অনুমোদন ব্যতীত অর্থ ব্যয় করা যাবে না। অর্থ আবশ্যিকভাবে ৩০ জুনের মধ্যে ব্যয় করতে হবে।

উপজেলা/থানা শিক্ষাকর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে কি না এবং মাইনর মেরামত কাজের অগ্রগতি বিষয়ে ৩০ জুনের মধ্যে নির্ধারিত ছকে একটি প্রতিবেদন ই-মেইলে (ধফঢ়ষধহফঢ়ব@মসধরষ.পড়স) প্রেরণ করতে হবে।

অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত সব আইন ও বিধিবিধান এবং ভ্যাট/আয়কর কর্তনসহ সরকারের প্রচলিত সব আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়- অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে বিল পাসের পর উপজেলা/থানা শিক্ষাকর্মকর্তা কোনোভাবেই নগদ অর্থের মাধ্যমে বিদ্যালয় পর্যায়ে অর্থ প্রদান করতে পারবেন না। অবশ্যই বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট হিসাবে অর্থ স্থানান্তর বা ক্রস চেকের মাধ্যমে তা প্রদান করতে হবে। ওই মেরামত কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ স্বচ্ছতা অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়মের জন্য ডিডিও দায়ী থাকবেন। এই পত্রের কপি সব প্রধান শিক্ষককে আবশ্যিকভাবে বিতরণ করতে বলা হয়, এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।

এদিকে মেরামত কাজের বরাদ্দপ্রাপ্তি বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তৌফিকুর রহমান গত শনিবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বরাদ্দের টাকা দিয়ে স্কুল ভবনের বড় দুটি রুমের বারান্দাসহ টাইলস লাগানোর কাজ করা হচ্ছে। ঈদের আগেই এই কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে স্কুলটির নানা সমস্যা বিরাজমান থাকায় আরো বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, এই স্কুলের টিনশেড ভবনটির পাশেই বাশের ঝাড় রয়েছে। এতে টিনগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। দ্রুত এগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। দেশের অধিকাংশ পুরোনো এবং নতুন স্কুল ভবনেই এ ধরনের নানা সমস্যা রয়েছে এবং তা সমাধানে অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত