ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিকিৎসা পাবে জরায়ু মুখ ক্যান্সার রোগীরা

চমেকে সচল করা হচ্ছে ‘ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন’

চমেকে সচল করা হচ্ছে ‘ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেকে) অচল পড়ে থাকা জরায়ু মুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন’ সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরো চট্টগ্রামের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই রয়েছে এ ধরনের সুবিধা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেশিনটি অকেজো থাকায় চিকিৎসাপ্রার্থীরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে মেশিনটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে চমেক কর্তৃপক্ষ। সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের সব আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা আসাটা বাকি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সচল হলেই রোগীরা পুরোদমে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে।

চমেক সূত্র জানায়, জার্মান প্রতিষ্ঠান বিআইবিআইজির কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন ক্রয় করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেবা চালু হওয়ার পর ২০১৯ সালে ৫৫ জন, ২০২০ সালে ৩৫ জন, ২০২১ সালে ১৬১ জনসহ মোট ২৫১ জনকে ব্র্যাকিথেরাপির সেবা দেওয়া হয়। ব্র্যাকিথেরাপি করতে সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং বেসরকারিতে ১১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। চমেক হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন এ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। গত বছরের ৬ জুন থেকে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ওই বছর ১৫ জুন সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলী এসে জানান, একটি অংশ নষ্ট হয়েছে মেশিনটির। সেই অংশটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে চলে যান তিনি।

মেশিনটি সচল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিএমএসডির (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) সঙ্গে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করে। মেশিনটি সচল করতে সিএমএসডির পক্ষ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা জানানো হয়। কিন্তু মেশিনটি সরবরাহ বাবদ বিল বকেয়া থাকায় প্রতিষ্ঠানটি মেশিন সচল করতে আগ্রহ দেখায়নি। বকেয়া বিল পরিশোধের কথা জানিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে গত বছরের শেষ দিকে বকেয়া বিলের সমস্যা নিরসন হয়েছে। তবুও সচল হয়নি মেশিন। অবশেষে মেশিন সচলের এ সুখবর এলো। সেই সঙ্গে চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের জন্য সুখবর বয়ে আনল।

মেশিন সচল করা নিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেয়িার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ব্র্যাকিথেরাপি সরবারহ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত সপ্তাহে কথা হয়েছে। বকেয়া বিল পরিশোধ, বিদেশ থেকে পার্টস আনাসহ যেসব বাধা ছিল সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষা বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের। শিগগির তারা আসবেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন একটি প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিসিভ না করায় দীর্ঘদিন সেটি পড়ে ছিল। অবশেষে তারা সেটি রিসিভ করে। সেখানে মেশিনটি সচল করবে। আর আমাদের হাসপাতালে পাটর্স লাগিয়ে দিয়ে যাবে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানটি। আশা করি, শিগগির ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি সচল হবে। এ ছাড়া সেটি স্ক্যান সেবা বন্ধ আছে এক সপ্তাহ ধরে। সেটি আগামী ২২ তারিখের মধ্যে সচল হবে।

ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনের গুরুত্ব নিয়ে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, এ যন্ত্র দিয়ে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিশেষ করে জরায়ু মুখ ক্যান্সার রোগীদের বেশি দরকার এই মেশিনটি। চট্টগ্রামে শুধু একটি মেশিন। প্রায় ১ বছর ধরে অচল রয়েছে। যার কারণে রোগীদের ঢাকা গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। গত বছর স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারসহ মোট ২ হাজার ৯৩০ জন ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে ৪১০ জন অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ১৪ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিলেন। তাদের বেশিরভাগকে ব্র্যাকিথেরাপি দিতে হয়েছে। সবাই ঢাকা গিয়ে এ সেবা নিয়েছেন। অচিরেই এ মেশিনটি ঠিক করা হোক।

জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রিনা বেগম। তিনি চলতি মাসের শেষ দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক দুইচারটি পরীক্ষা দেয়। তার মধ্যে সিটি স্ক্যান চমেক হাসপাতালে, দুটি এভারকেয়ারে এবং একটি ব্র্যাকিথেরাপি ঢাকা গিয়ে করতে পরামর্শ দেয় চিকিৎসক। তিনি মুঠোফোনে বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষ আমরা। চিকিৎসাসেবা নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গত সপ্তাহে আমার ছেলে ঢাকা যায়। সিরিয়াল নিয়ে আসে, সিরিয়িাল পড়েছে ঈদের পর। অথচ চমেক হাসপাতালে ঠিক হলে বিনা ভোগান্তিতে করতে পারতাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত