ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে কোরবানির হাটে

অনলাইনে পশু বিক্রি মিলছে নানা অফার

ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে অনলাইনে ঝুঁকছে
অনলাইনে পশু বিক্রি মিলছে নানা অফার

ঈদকে ঘিরে অনলাইনে পোশাক বেচাকেনা বহু আগেই শুরু হয়েছে। তবে এবার ঈদুল আজহা সামনে রেখে হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও কোরবানির পশু বিক্রির হিড়িক লাগছে। হাটের বাইরে অনেকে অনলাইনে পশু কিনতে পছন্দ করেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ফার্মগুলো কোরবানির পশু বিক্রিতে বিভিন্ন অফার দিচ্ছে।

ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও এরই মধ্যে ক্রেতাদের অনেকে অনলাইনে পছন্দের পশু বুকিং করেছেন। অনলাইনে আবার ক্রেতাদের কেউ আসছেন পশু দেখতে, আবার কেউ আসছেন পছন্দ করে বুকিং দিতে। পশুর ওজন ও দাম সঠিকভাবে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে ক্রেতারা পশু কিনে সন্তুষ্ট হচ্ছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এবার ঈদুল আজহায় চাহিদার তুলনায় প্রায় ২১ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে। কোরবানির পশু নিয়ে চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল ও পরিবহন নিশ্চিত করা হবে। দেশে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা আছে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। আর কোরবানির জন্য দেশে পশু আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি; যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার বেশি। এই হিসেবে এবার চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি বেশি আছে। মোট কোরবানির পশুর মধ্যে আছে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি গরু-মহিষ, প্রায় ৭৭ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং আড়াই হাজারের বেশি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু।

অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার বিষয়ে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদক আলোচনা করেন। ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির হাটে পশু কিনতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ঈদকে ঘিরে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দালালচক্র আকাশচুম্মি পশুর দাম চায়। বৃষ্টিতে হাটে কাদা, যানজট-জনজট, দালালদের খপ্পর, ছিনতাই, জাল টাকাসহ ইত্যাদি ঝামেলায় পড়তে হয় ক্রেতাকে। তাই ঝক্কিঝামেলা এড়াতে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকেও ক্রেতারা ভিড় করছেন অনলাইন কোরবানির হাটে। এছাড়াও ১০০ কেজি মাংস হবে, এমন ওজনের পশু হাটে কেনার পর তা ৭০ থেকে ৭৫ কেজি মাংস হয়। প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পেতে অনলাইনে পশু কেনার দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।

অনলাইন হাটে কোরবানির পশু বিক্রি গতবারের চেয়ে এবার কয়েক গুণ বাড়বে। অনলাইনে পশু কিনে কেউ ঠকবেন না বলে আশ্বস্ত করছে ফার্মগুলো। সেজন্য ক্রেতা ধরতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ই-কমার্স সাইটগুলো। অনলাইনে পশু কিনতে মোবাইলেও ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর শনিরআখড়া, ভাটারা, দিয়াবাড়ি, মিরপুর, বাড্ডা, বছিলা, কাওলা, তেজগাঁও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এখনো হাটে পশু ওঠেনি। তবে এরইমধ্যে অনলাইনে জমে উঠছে পশুর হাট। অনলাইনে পশুর হাটে বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, প্রতি বছরই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির সংখ্যা বাড়ছে। যারা হাটে গিয়ে দরদাম করে কোরবানির পশু কেনার ঝক্কিঝামেলা পোহাতে চান না তারা অনলাইনে কেনেন। এছাড়া প্রবাসীরাও এখন অনলাইনে পশু কেনার দিকে ঝুঁকছেন। বিদেশে বসেই তার কোরবানির পশু দেখে কিনতে পারছেন।

রাজধানীর ফার্মগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে অবস্থিত ‘সাদেক এগ্রো’ বেশ সুপরিচিত। অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছে- সাদেক এগ্রো, আমারদেশ ই-শপ, বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, ক্লিকবিডি ডটকমসহ আরো কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এছাড়া পেশাদার অনলাইন হাটগুলোর পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কোরবানির হাট।

সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ শাহারিয়ার পরশ বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারো প্রস্তুতি ভালো। আমাদের কালেকশনের সব পশু এরইমধ্যে এসে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করি ক্রেতাসাধারণের চাহিদামতো পশুর জোগান দিতে। ব্রাহমা, ইন্দো ব্রাজিল, হোলস্টাইন, দেশাল, শাহীওয়ালসহ আরো কয়েকটি জাতের গরু আছে। মহিষ আছে ৪ ধরনের। ছাগল আছে বেশ কয়েকটি প্রজাতির। এর বাইরে ৪ জাতের দুম্বাসহ উটও আছে আমাদের খামারে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে হাটের তুলনায় অনলাইনে পশু বিক্রির পরিমাণ বেশি না হলেও প্রতিবছর ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে এসব সাইটে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৌতূহলী ভিজিটরের সংখ্যা। কোরবানির পশু বিক্রির সাইটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জাতের গরু ও ছাগল রয়েছে। তবে দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। গরুর দাম ৬৫ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছাগলের দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়েছে। ঈদের কত দিন আগে বাসায় গরু নিতে চান, তা নির্ধারণ করার সুযোগও আছে। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রামেও পছন্দের গরু-ছাগল পৌঁছে যাওয়ার অফার রয়েছে। এমনকি পশু কেনার পর সেটি জবাই এবং প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।

অনলাইনে গরুর ক্রেতা সোহাব মোল্লা বলেন, ভিড় ঠেলে কাদা মাড়িয়ে কোরবানির হাটে গিয়ে পশু কিনতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। গত বছর অনলাইনের মধ্যমে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির গরু কিনেছিলাম। এবারো একইভাবে পশু কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।

করোনা মহামারিতে অনলাইন পশুর হাট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গত বছরগুলোর মতো এবারো অনলাইনে কোরবানির পশুর পসরা সাজিয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। কোনো কোনো প্ল্যাটফর্মে দরদামেরও সুযোগ থাকছে। প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার করা পশুর হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করছে। বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশুর মাংস কেটে পরিষ্কার করে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

ডিজিটাল হাট: এটুআই এক শপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে সরকারি এই প্ল্যাটফর্ম। ডিজিটালহাট ডট জিওভি ডট বিডি এই ওয়েবসাইটে গিয়ে পশুর ছবি ও সব তথ্য দেখে যে কেউ অর্ডার করতে পারবেন। এবারো বিক্রয়ডটকম থেকে কোরবানির পশু কেনা যাবে। এরইমধ্যে এই সাইটে বেশ কিছু কোরবানির পশুর ছবিসহ বিশদ বিবরণ আপলোড করা হয়েছে।

বেঙ্গল মিট: কোরবানির পশু বিক্রির ক্ষেত্রে বেঙ্গল মিট এরইমধ্যে আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। বেঙ্গল মিটে শুধু অনলাইনে বুকিং দিয়ে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করলেই ক্রেতার ঠিকানায় পশু কোরবানি করে নির্দিষ্ট সময়ে মাংস পৌঁছে দেয়া হয়।

সাদেক অ্যাগ্রো: কয়েক বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছে সাদেক অ্যাগ্রো। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদেক অ্যাগ্রোর রয়েছে নিজস্ব খামার। এই ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ পশুর ছবি, মূল্যসহ বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত