ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাট অপেক্ষা গরু-ছাগলের

প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাট অপেক্ষা গরু-ছাগলের

দেশের আকাশে ১৯ জুন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় ঈদুল আজহা পালিত হবে আগামী ২৯ জুন। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে পশুর হাটগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অধিকাংশ হাটই প্রস্তুত। হাটে জায়গা চিহ্নিত করে বেপারিরা নাম লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা গরু-ছাগল তোলার এবং বিক্রির জন্য ক্রেতার আগমনের। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব হাটে আনা হবে লাখ লাখ পশু। এরই মধ্যে গাবতলীসহ কয়েকটি হাটে গরু-ছাগল উঠাতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীতে গাবতলী ও সারুলিয়ার স্থায়ী দুটির পাশাপাশি অস্থায়ী ১৭টি পশুর হাট বসবে। হাটগুলোর ইজারাদাররা এরই মধ্যে বেশিরভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া পুলিশ প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য আয়োজন সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইজারা হওয়া রাজধানীর হাটের জায়গাগুলোয় কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। হাটে নির্ধারিত জায়গাগুলো বিভিন্ন খামারের লোকজন এবং ব্যবসায়ীদের গুছিয়ে নিতে দেখা গেছে। হাটের ভেতরে গরু বাঁধার জন্য বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে শেড তৈরি করা হচ্ছে। কোথাও কোথায় বাঁশ বাঁধার কাজ শেষ। অপেক্ষা পশু মালিকদের। গরু-ছাগল নিয়ে আসা শুরু হলে বেপারিরা খুঁটিকেন্দ্রিক ত্রিপল বা পলিথিন বসিয়ে নিজ নিজ পশু বেঁধে রাখবেন।

অন্যদিকে, পশুর হাট-সংলগ্ন মেইন রোডে বড় বড় গেট করা হয়েছে। গেটগুলোয় চলছে আলোকসজ্জার কাজ। এসব পশুর হাট সাজাতে সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি ইজারাদার বা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্তরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ হাট গাবতলীতে দেখা গেছে হাট প্রস্তুতির কাজে বিভিন্ন ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের ২০০ জন কর্মী কাজ করছেন। স্থায়ী পশুর হাট হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে এখনো এখানে পশুবাহী বড় গাড়ি আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। হাট প্রস্তুতির কাজ তদারকিতে সম্পৃক্তরা বলেছেন বৃষ্টি-বাদলা কিছুটা বিঘ্নিত করলেও আজকের মধ্যেই সব প্রস্তুত হয়ে যাবে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে বিক্রি।

রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাটও প্রস্তুত। আগামী শুক্রবার থেকে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

মতিঝিল, কমলাপুর, গোপীবাগ, মুগদা, খিলগাঁও, মলিবাগ, মগবাজার ও মতিঝিল-ইস্কটিনের অফিসপাড়া এলাকার বাসিন্দারা এই হাট থেকে কোরবানির জন্য পশু কিনে থাকেন। প্রস্তুত না হওয়ায় এই হাটে এখনো পশু আসা শুরু করেনি।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর হাটের বিভিন্ন অংশ ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাট প্রস্তুতের শেষ পর্যায়ে হলেও পরিপূর্ণভাবে শেষ হতে আরো অন্তত দুই দিন লাগবে। তাদের আশা, আগামী শুক্রবার থেকে এখানে পশু বেচাকেনা শুরু করা যাবে।

হাটের প্রধান প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে কমলাপুর ও মুগদার সংযোগ সড়কে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ দিয়ে ও গোপীবাগ হয়েও পশু প্রবেশের পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ পথে হাসিল দেওয়ার কাউন্টার বসানো হচ্ছে। এছাড়া কমলাপুরের উট খামারের আগে, দেওয়ানবাগ শরিফের সামনে ও গোপীবাগের প্রবেশমুখেও হাসিল সংগ্রহের কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে। হাট শুরুর আগে কাউন্টারের সংখ্যা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০টিতে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের অন্তত ১০ দিন আগেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। বেশির ভাগ হাট প্রস্তুতের কাজ শেষের দিকে। কমলাপুরের অস্থায়ী এই পশুর হাটের প্রস্তুতিও এখন শেষ পর্যায়ে। হাটের পাশে অবস্থিত সাদেক হোসেন খোকা কনভেনশন সেন্টারে হাট-সংশ্লিষ্ট কর্মীদের অস্থায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গাবতলীর অস্থায়ী পশুর হাটের ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, ঈদকেন্দ্রিক হাটের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ঈদের এখনো ৯ দিন বাকি। এরই মধ্যে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ওয়াচ টাওয়ারের কাজ শেষ। ১১টি হাসিল ঘরের মধ্যে আটটির নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। হাট জমলে বাকি তিনটাও সম্পন্ন হবে। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরগুনা, নাটোর, মেহেরপুর, রাজশাহী, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের ৬০ জন বড় বেপারি এরই মধ্যে সেড বরাদ্দ নিয়েছেন। সেগুলোর কাজও প্রায় শেষ। তিনি বলেন, এবার হাটের হাসিল লেখার জন্য লোক নিয়োগ করা হয়েছে ৪০০ জন। স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে দুই বেলা মিলে ৮০০ জন। স্থায়ী টয়লেট কিছু আছে। অস্থায়ীভাবেও কিছু বসানো হবে।

‘কোরবানির পশু এখনও আসা শুরু হয়নি। তবে ১২ মাস যারা এই স্থায়ী পশুর হাটে ব্যবসা করেন ওইসব ব্যবসায়ী গরু-খাসিসহ অন্যান্য পশু আনছেন কোরবানি উপলক্ষ্যে। অন্য বছরের ন্যায় এবারও হাসিল একই থাকছে হাটে। শতকরা ৫ টাকা, হাজারে ৫০ টাকা, লাখে ৫ হাজার টাকা হাসিল। গত কোরবানির ঈদে ছাগল, গরু, ভেড়া, মহিষ মিলে বিক্রি হয়েছিল ২০ হাজারের বেশি পশু।’

‘এবার যদি হাটে পশুর সরবরাহ বেশি হয় তবে দাম কমবে, আর যদি কম হয় তাহলে বাড়বে দাম। তবে প্রতি বছরই সরকারি হিসাবে ৭ শতাংশ বিক্রি বাড়ে। সেই হিসাবে এবারও পশু বিক্রি বাড়ার আশা করছি।’ হাট কবে থেকে পুরোদমে জমে উঠবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাবতলী হাটে প্রতিদিনই বেচাকেনা হয়। তবে আগামী শুক্রবার ঈদের বেচাকেনা জমবে পুরোদমে।’

রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির খেলার মাঠে দেখা গেছে সারি সারি বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা ব্যাপারী ও হাটের কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা করেছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আলাদা করে নির্মাণ করা হয়েছে পশুর খাবার রাখার স্থানও। একই অবস্থা দেখা গেছে হাজারীবাগ লেদার ইনস্টিটিউট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া অস্থায়ী হাটেও।

রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি মাঠের ইজারাদার সোলায়মান সেলিম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ জুলাই থেকে পশু বিক্রি শুরু হবে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে আমরা অন্তত দুই-তিন দিন আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করব।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ডিএনসিসিতে একটা স্থায়ী গরুর হাট ছাড়া আরো আটটি অস্থায়ী হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে হাটগুলো প্রস্তুত হয়ে যাবে। এর মধ্যে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আটটি হাটে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান কে বলেন, যারা হাটগুলো ইজারা নিয়েছেন, আগত ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করতে তাদের আমরা সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছি।

নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন বলেন, হাটগুলোতে নিণ্ডিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চাঁদাবাজি প্রতিরোধ ও সড়কে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, গত রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে হাট বসা নিষিদ্ধ থাকবে। পশুহাটে পশু চিকিৎসক থাকবেন। পশু কোনো নির্ধারিত হাটে নেওয়ার জন্য জোর করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসিলের পরিমাণ সাইন বোর্ডে লেখা থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোরবানির পশুবাহী যানবাহন থামানো যাবে না। পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে, জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন ও এটিএম বুথও থাকবে।

মন্ত্রী বলেন, সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে পশুর হাট। এ বছর সারা দেশে কমবেশি ৪ হাজার ৩৯৯টি পশুর হাট বসবে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। এসব হাটে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক-মহাসড়কে যাতে কোনো প্রকার হাট না বসে, আমরা সে ব্যবস্থা নেব। পশুবাহী যানটি কোন হাটে যাচ্ছে, তা সামনের ব্যানারে লেখা থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্য কেউ পশুবাহী যানবাহন সড়ক-মহাসড়ক কিংবা নৌপথে থামাতে পারবে না সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া। কেউ থামালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত