ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফার্মেসিতে মিলছে অনিবন্ধিত ওষুধ

বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ফার্মেসিতে মিলছে অনিবন্ধিত ওষুধ

চট্টগ্রাম নগরীর ফার্মেসিগুলোতে দেদারসে পাওয়া যাচ্ছে অনিবন্ধিত ওষুধ। নানা নামের ওষুধগুলো দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো তৈরি করে না। অখ্যাত ওষুধ কোম্পানিগুলো এসব নতুন ধরনের ওষুধ তৈরি করে সরবরাহ করে ফার্মেসিগুলোতে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের এসব ওষুধ লিখে দেন প্রেসক্রিপশনে। অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব ওষুধ কেনেন রোগীরা। এতে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

সর্বশেষ ১৯ জুন চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জব্দ করেছেন ছয় লাখ টাকার বিপুল অবৈধ ওষুধ। আদায় করা হয় ৬০ হাজার টাকা জরিমানাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর প্রায় সর্বত্রই অনিবন্ধিত ওষুধের ছড়াছড়ি। নগরীর পাশাপাশি গ্রাম এবং উপজেলা সদরের ফার্মেসিগুলোতেও এসব ওষুধ মিলছে দেদার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্বনামধন্য চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনবিন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রাইভ করার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে চকবাজারের কাছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসিতে অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে র‌্যাব লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওষুধ তৈরির একটি কারখানা আবিষ্কার করে। আটক করে জড়িত কয়েকজনকে। তারা র‌্যাবকে জানিয়েছিল স্বনামধন্য কয়েকজন চিকিৎসকের নাম। যারা এসব ওষুধ রোগীকে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন। বিনিময়ে তাদের প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয়। সর্বশেষ নগরীর আগ্রাবাদে আমেরিকান হাসপাতাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৬ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ১৯ জুন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (আমেরিকান হাসপাতাল) অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। অভিযানে হাসপাতাল গেটের সামনের মা ফার্মেসি, মা মেডিকেয়ার এবং স্বাগতা ফার্মেসি থেকে চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করা হয়। এ সময় প্রত্যেক ফার্মেসিকে ২০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে ফার্মেসির মালিকরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের ডাক্তাররাই এসব অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন। তাই তারা বিক্রি করছেন। ফার্মেসি ও চর্ম হাসপাতালের সামনে বেশ ক’জন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তাররা এমন ওষুধ লিখেন যা সেখানে অবস্থিত ৩-৪টি ফার্মেসি ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। রোগীদের প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালের স্লিপে বিভিন্ন অনিবন্ধিত ওষুধ লেখা হয়েছে। ওই এলাকার এক ফার্মেসি মালিক জানান, অনিবন্ধিত ওষুধ হিসেবে প্রেসক্রাইভ করা প্রতিটি বিদেশি ক্রিমের দাম এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি ক্রিমে ডাক্তার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পান। এছাড়া এই হাসপাতালের সব রোগীদের ‘মেডিলিভ’ নামক একটি ল্যাবে টেস্ট করানোর জন্য বলে দেয়া হয়। হাসপাতালের সামনেই দালালরা দাঁড়িয়ে থাকে। হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনিয়মের সরাসরি প্রমাণ পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফীন বলেন, এ ওষুধগুলো ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিবন্ধিত নয়। এগুলো কোনো ফার্মেসিতে বিক্রি করা যাবে না। কোনো ডাক্তার এগুলো প্রেসক্রাইভ করতে পারবেন না। কিন্তু এই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা কেন এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন তা বোধগম্য নয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে এক ফার্মেসির মালিক জানান, বিদেশি প্রচুর ওষুধ তাদের কাছে থাকে। এসব ওষুধ শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া রোগীদের সরবরাহ করা হয় না। নির্ধারিত চিকিৎসকরা এসব ওষুধ লিখে দেন। রোগীরা তা ক্রয় করেন আমাদের ফার্মেসি থেকে। তবে আমরা প্রেসক্রিপশনের বাইরে কোনো ওষুধ কোনো রোগীর কাছে সরবরাহ করি না। চিকিৎসকরা লিখেন বলেই আমরা বিক্রি করি। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দায় নেই। দায় থাকলে তা চিকিৎসকের। ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু হাসপাতালে একশ্রেণির চিকিৎসক রোগীদের নিবন্ধিত নয় এমন ওষুধ লিখে দেন। এসব ওষুধ দেশের বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো তৈরি করে না। ওষুধ যেমন অখ্যাত কোম্পানিগুলোও অখ্যাত। যেহেতু চিকিৎসকরা লিখে দিচ্ছেন তাই কোনো ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ ছাড়াই রোগীরা কিনে খান। অথচ এসব ওষুধে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত