ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মার্কিন কোম্পানির সাথে ইডিসিএলের চুক্তি স্বাক্ষর

আলোর পথে ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট চিকিৎসা খাতে বড় সাফল্য

আলোর পথে ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট চিকিৎসা খাতে বড় সাফল্য

দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই এমওইউ সই হয়। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল এবং ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মার্ক এমালফার্ব সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই ভ্যাকসিন প্ল্যান্টটি একটি অত্যাধুনিক প্ল্যান্ট হবে। আমরা প্রথমে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করব। এখানে অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদনেরও ব্যবস্থা থাকবে। করোনা ভ্যাকসিন তৈরির পাশাপাশি যেগুলো আমাদের প্রয়োজন হয় ১২ ধরনের ভ্যাকসিন আস্তে আস্তে তৈরি হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, করোনার সময় আমাদের ৩৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আনতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভিত্তি করে যদি তার মূল্য ধরা হয় তাহলে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন পেয়েছি। আমরা বেশিরভাগ ফ্রি পেয়েছি। বাকিটা সরকারের অর্থায়নে কেনা হয়েছে। আমরা এই প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জে স্থাপন করছি। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির নিজস্ব জমির পাশে জায়গা দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় ৭ থেকে ৮ একর জমিতে এই প্ল্যান্ট হবে। এখানে যে ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে, তা অন্তর্জাতিক মানের হবে। আশা করি আমরা বিদেশে এই ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ২ বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারব। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করতে ৪ বছরের মতো লাগবে। এই প্রজেক্ট পুরোপুরি সফল হলে আমাদের ভ্যাকসিন আমদানির প্রয়োজন হবে না।

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, এমওইউ’র আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে ভ্যাকসিন উৎপাদন সংরক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে।

জানা গেছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ইডিসিএল কারখানার সক্ষমতাকে বিশেষ বিবেচনায় নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভ্যাকসিন উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি হচ্ছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন উৎপাদন উপদেষ্টা কমিটি। এই কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীকে। এছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া ৯ সদস্যবিশিষ্ট অপর একটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়।

ইডিসিএল এমডি অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, দেশে ভ্যকিসিন কারখানা হবে। এটা সরকার প্রধানের স্বপ্নের প্রজেক্ট। এ লক্ষ্যে আমাকে দায়িত্ব দেয়ার পর দীর্ঘ ২ বছর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন কারখানার জন্য নির্ধারিত জায়গা ছাড়তে রাজি না হওয়া ৯ জনের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধ করতে হয়েছে। সেখানে দেওয়ানি মামলা হয়েছে। সেগুলো সামাল দিয়ে আসতে এ সময় লেগেছে। এরপর যখন আমাকে জমি অধিগ্রহণের টাকা দিতে বলা হয়েছে আমি অল্প সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করেছি। ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য একটি কারখানা করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। এখানে বিশাল কর্মযজ্ঞ আছে। কারখানা স্থাপনের জন্য জমির পাশাপাশি টাকারও প্রয়োজন আছে। এজন্য যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তাতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার (আনুমানিক ৩ হাজার কোটি টাকার মতো) বিনিয়োগ করবে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, আগামী বছরের মার্চের দিকে এ অর্থ পাওয়া যাবে বলে জানান ইডিসিএলের এমডি এহসানুল কবির জগলুল। আনুমানিক সাড়ে ৬ একর জমির অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সমন্বয় করার শর্তে ইতিমধ্যে ব্যায় হয়েছে ইডিসিএলের নিজস্ব তহবিল থেকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত