প্রযুক্তিসমৃদ্ধ স্মার্ট দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন। উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি এবার পা রাখছে চুয়াত্তর বছরে। বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জনগুলো এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হলেও সময়োপযোগী কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের মধ্যদিয়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ। দলকে তথ্য-প্রযুক্তিতেসমৃদ্ধ করে স্মার্ট আওয়ামী লীগ হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় থাকছে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র থাকবে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সেই ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘স্মার্ট কর্ণার’। ‘স্মার্ট কর্ণার’ থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে দলটি। প্রশিক্ষণ কর্মশালার নেতৃত্বে থাকবে দলটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। প্রশিক্ষিত নেতাকর্মীরা চষে বেড়াবেন রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মানুষের কাছে ছুটে যাবে আওয়ামী লীগের স্মার্ট নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখন থেকেই কাজ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের সবকিছুই গণমুখী ও প্রগতিশীল চিন্তা থেকে করা হয়। দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের সব সময়ই থাকে। সেখানে নবীনদের গুরুত্ব দেয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে দলকে আরো শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে তুলতে পারে। দলকে যুগোপযোগী করা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হয়। নির্বাচন সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচন পর্যন্ত দলকে আরো সুসংগঠিত করে দলের পরিধি বাড়ানো হবে।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গিকার তুলে ধরে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার।

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু সত্য-সুন্দর ও সোনালি অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই তা অর্জিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ বরাবরই তারুণ্যনির্ভর স্মার্ট দল। আর তরুণরাই হচ্ছে আগামীর ভবিষ্যৎ। যে দলের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ যত বেশি, সে দলের ভবিষ্যৎ তত বেশি উজ্জ্বল। যেকোনো দল বা সংগঠন থেকে যুবসমাজ মুখ ফিরিয়ে নিলে তার স্থায়িত্ব নিয়েই দেখা দেয় সংশয়। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস না থাকলে দল হয়ে যায় বদ্ধ জলাশয়ের মতো। সেই দলের অস্তিত্ব কোনো রকমে টিকে থাকলেও তা কাজে লাগে না। তারুণ্যের প্রাণোচ্ছাসে দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সময়োপযোগী কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে যুগ যুগ টিকে থাকবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতি দল রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীনতম, জনপ্রিয়, রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কিন্তু একে বারে কম। দেশের রাজনীতির মূলধারার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য রয়েছে। এই দল সময়ের পরিবর্তনের সাথে-সাথে যুগোপযোগী মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ এখনো অধিক জনপ্রিয়। প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল হলেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচে আধুুনিক সংগঠন। এজন্যই আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছে। নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, ‘তারুণ্যে শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালের ২৩ জুন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করার জন্য, ডিজিটাল আওয়ামী লীগ দরকার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেদিন তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতিটি জেলা-মহানগর কমিটিকে ল্যাপটপ তুলে দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই আমাদের কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে সব জেলা-মহানগরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। দলের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছি। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করার মধ্যদিয়ে একটি তথ্য ভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে অধিক পরিমাণে আধুনিক ডিভাইসের ব্যবহার চালু রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় স্মার্ট কর্নার নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে জনমানুষের আকাঙ্খাকে ধারণ করছে।

আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তখনকার তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ মুক্তিযুদ্ধের পরে পাকিস্তান শব্দটি বাদ গিয়ে দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। এদিকে সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে।

দিনটি উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সূর্য উদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এছাড়া দিনটি উপলক্ষ্যে টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকাল সাড়ে ৩টায় আলোচনা সভার আয়োজন করবে দলটি। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির মধ্যে থাকবে- সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও র‌্যালি, প্রচার ও পুস্তিকা প্রকাশ, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।