ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউপি সদস্য ফরিদা খাতুন

জনসেবার পর চা বিক্রি করেন অবসর সময়ে

জনসেবার পর চা বিক্রি করেন অবসর সময়ে

‘জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি এক কাপ চা বানিয়েই না খাওয়াতে পারি, তবে জনপ্রতিনিধি হয়ে লাভ কি’ অভিনেতা মোশাররফ করিমের বিজ্ঞাপন চিত্রে এমন সংলাপ শোনা গেলেও বাস্তবেই এমন একজন জনপ্রতিনিধির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা আসনের ইউপি সদস্য জনপ্রতিনিধি ফরিদা খাতুন। ফরিদা খাতুন এলাকার জনসেবার পর স্বামী-সন্তান নিয়ে টানাপড়েনের সংসারে একটু সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিজেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে অহমিকার জালে আবদ্ধ না রেখে দুর্নীতির উর্ধ্বে থেকে সততার সঙ্গে লোকলজ্জা ভুলে চা বিক্রি করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন। তার এই আত্মস্বীকৃতির পুরস্কারস্বরূপ এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভালো কাজের অবদান রাখায় দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ফরিদা। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও সামলাতে হয় নিজ কর্মসংস্থান ও চায়ের দোকান। একজন ইউপি সদস্য হয়েও সাদামাটাভাবে জীবনযাপন করেন তিনি।

উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বশোয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা খাতুন জীবন জীবিকার তাগিদে স্থানীয় বশোয়া বাজারে চায়ের দোকান চালান। গ্রামের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসায় ২০১৭ সালে প্রথমবার এবং ২০২২ সালে দ্বিতীয়বার ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ফরিদা খাতুন বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার লোকজনের সম্মতিতে আমি ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচার-প্রচারণা চালান এবং খরচ বহন করেন। এই নারী ইউপি সদস্যের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একটি দোচালা ছোট টিনের ঘরে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দোচালা টিনের ঘর ছাড়া তার আর কোনো জমি-জায়গাও নেই। অর্থবিত্তহীন এই সংগ্রামী নারী একজন চা বিক্রেতা হয়েও কেন এত জনপ্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে, স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ফরিদা খাতুন একজন সৎ মানুষ, মানুষের বিপদে আপদের কথা শুনলে রাত বিরাতে তিনি ছুটে যান মানুষের পাশে। নিজের বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে গ্রামের মানুষের জন্য রাস্তায় মাটি ফেলে রাস্তা মেরামত করেছেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন তিনি। তার নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। কেউ বিপদে পড়লে রাতের আঁধারে ডাকলেও তাকে পাওয়া যায়। নিজের টাকা খরচ করে মানুষের পাশে দাঁড়ান।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফরিদা খাতুন বলেন, আমার জমি জায়গা নাই, চা বিক্রি করে সংসার চালাই। খুব কাছ থেকে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছি, কখনো কখনো মনে হতো যদি সুযোগ থাকত গ্রামের মানুষের সেবা করতাম। কিন্তু আমার সাধ আছে সাধ্য নাই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্মানীয় ভাতা পাই তা দিয়েও চেষ্টা করি মানুষের জন্য কিছু করে দিতে। গ্রামের মানুষই আমাকে মেম্বার বানিয়েছে। আমি নির্বাচিত হবার আগে থেকেই চায়ের দোকান চালাই। এই দোকানে সব মানুষ তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বলে। আমি সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করি পাশে দাঁড়াতে। তিনি আরো বলেন, আমি ২০০২ সালে এসএসসি পাস করি। অর্থের অভাবে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে আমার নির্বাচিত এলাকায় শিশুদের শিক্ষার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতে সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শপথ গ্রহণের পর থেকেই প্রায় দিনই ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় মিটিং থাকে। সেগুলোতে অংশ নিতে হয়। যেদিন বাইরে মিটিং থাকে সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দোকান খুলে ঘণ্টাখানেক ব্যবসা করে চলে যাই। বাইরে কাজ শেষে আবার বিকালে দোকান খুলতে হয়। কারণ চায়ের দোকান ছোট একটি অফিসের মতো। লোকজন আসে তাদের নানা সমস্যা নিয়ে। চা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরও সমস্যার সমাধান করতে হয়। এক বেলা দোকান না খুললে ঘুরে যেতে হয় মানুষকে। এতে মানুষ কষ্ট পায়। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চাই। শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ফরিদা খাতুন একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি। তিনি তার সব দায়িত্বই ঠিকঠাকভাবে পালন করেন। সেজন্য তিনি অন্য সহকর্মীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। তাকে নিয়ে পুরো পরিষদ গর্বিত। সে খুবই গরিব মানুষ, মানুষ হিসেবে ভালো। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত