ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা

উজানের ঢলে বহু গ্রাম প্লাবিত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ
বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা

সর্বোচ্চ শীত ও গরম শেষে বর্ষার মৌসুম শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও উজানের ঢলে কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে। নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যার আশঙ্কায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দুই দফা বন্যা হয়। প্রথম দফা মে থেকে জুলাই। দ্বিতীয় দফা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। চলতি মাসে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন জেলার নদ-নদী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বন্যার বিষয় এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে নদীর চ্যানেলগুলোতে পানি চলাচলের ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমেছে। অনেক জায়গায় চর পড়েছে, হাওর অনেক জায়গায় ভরে ফেলা হয়েছে, পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা হয়েছে, এগুলোর ফলে আগে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারলেও এখন পানি নেমে যেতে বেশি সময় লাগছে।

জানা গেছে, আষাঢ়ে বৃষ্টি হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে অতি বৃষ্টি হলেই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নদীতে পানি বৃদ্ধির ৯৩ শতাংশই উজানের দেশ ভারত, নেপাল, চীন ও ভুটানের। এসব দেশের পাহাড়ি ঢল বাংলাদেশে বন্যার প্রধান কারণ। দেশের ভেতরের বৃষ্টি নদীর বন্যার ওপর তেমন একটা প্রভাব ফেলে না।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলেই বন্যা হবে, এমন নয়। বৃষ্টি না হলেও বন্যা হতে পারে। দেখতে হবে আমাদের নদ-নদীর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পানি বেশি আসছে কি না? এগুলো যখন উপচে পড়বে তখনই বন্যা হবে।

কুড়িগ্রাম: দফায় দফায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার ৬০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৩০টি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার সবকটি নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ৬০ গ্রাম প্লাবিত। এতে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ।

নীলফামারী: নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ওঠানামা করছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি কমা-বাড়ার কারণে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি ওঠানামা করলেও বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি ওঠেনি। তবে বিস্তীর্ণ এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আরো বেড়েছে। এতে জেলার নদীবেষ্টিত ১৬৫ চরের নিম্নাঞ্চল ডুবতে শুরু করেছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যেতে শুরু করেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধার পাশাপাশী জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর বন্যার আশঙ্কায় সময়ের আগেই খেত থেকে পাট কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ: ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢল নামছে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে। আর নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে সদর ও ছাতক উপজেলার বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক। সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরগুলো ফুলে উঠছে। ঢলের পানি হু-হু করে ঢুকছে খাল-বিল-হাওরে। জেলার সব ক’টি হাওর এখন পানিতে ভরপুর। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিউল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলে গত বছর ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এবারো পানি বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ক্ষতি হবে। বন্যা হলে গরু-ছাগল নিয়ে মানুষ বেশি কষ্ট পরেন। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। এভাবে যদি আগামী সাত দিন হয়, তাহলে সুনামগঞ্জে নদীর পানির লেভেল আরো বেড়ে বন্যা হতে পারে।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে কমলগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১০ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পাউবোর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, ধলাই নদীতে পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। নদীটির প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। ফলে আপাতত ঝুঁকিমুক্ত আছে বাঁধ। তারপরও উপজেলা প্রশাসন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।

পাহাড়ি ঢল ও মুষলধারে বৃষ্টিতে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সিলেটে বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে গত ১৫ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় বন্যা পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে সিলেট সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় জানানো হয়, বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য দুটি বড় নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত