ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে পথে পথে পশুর হাট রাজস্ব আদায় কমার আশঙ্কা

রোগাক্রান্ত পশু বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা
চট্টগ্রামে পথে পথে পশুর হাট রাজস্ব আদায় কমার আশঙ্কা

চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের উপজেলার বড় সড়ক থেকে ছোট সড়ক দুই পাশেই খুঁটিতে বেঁধে কোরবানির পশু বিক্রি চলেছে। বড় বাজার বাদ দিয়ে ছোট ছোট গলি ও সড়ক কেন্দ্রীক বাজারে এখন দেদার মিলছে গবাদি পশু। এতে চসিক হারাচ্ছে রাজস্ব। আর লোকজনকে পোহাতে হচ্ছে যানজটের দুর্ভোগ। সম্প্রতি সিএমপির নির্দেশনায় পথে পথে কোরবানির পশু কেনা-বেচা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এতে খুব কাজ হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কোরবানির পশুর হাটে রোগাক্রান্ত পশু বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এরইমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২২২টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে।

প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে অনুমোদিত পশুর হাটের বাইরে নগরজুড়ে পশু কেনা বেচা চলে। এতে পথে পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কোরবানির পশুর মলমুত্র পরিবেশ নষ্ট করে। ক্রেতাদের একটি অংশ বড় বাজারে না গিয়ে গলির মুখে পথের পাশের অস্থায়ী বাজার থেকে কোরবানির পশু কিনে নেন। ক্রেতারা মনে করেন এতে হাসিল বাবদ কোনো বাড়তি অর্থ দেয়া থেকে তারা মুক্ত থাকবেন। আর বিক্রেতারাও তাদের নিরুৎসাহিত করেন বড় বাজার থেকে কোরবানির পশু না কিনতে। ফলে কোরবানির আগেই নগরজুড়ে সড়কের পাশে জমে উঠেছে অনুমোদনবিহীন কোরবানির পশুর বাজার।

জেলা প্রশাসন ও চসিক সূত্র জানায়, নগরীতে স্থায়ী তিনটির পাশাপাশি এবার ৯টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে সিটি করপোরেশনকে (চসিক) অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদিও ২৩টি অস্থায়ী হাট বসাতে অনুমতি চেয়েছিল চসিক। গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে নগরের ৯টি স্থানে হাট বসাতে অনুমতি দেয়া হয়। গত বছর চার স্থানে অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনটি স্থানে অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছিল। সে হিসেবে এবার নগরে পশুর হাট বেড়েছে ৬টি।

চসিক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে নগরে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় বাজার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত ১১ মে জেলা প্রশাসনের কাছে মোট ২৩ স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে অনুমতি চায় চসিক। এরপর জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটি-এসবি) কাছে মতামত চায়। ১২ জুন সিটি এসবি জেলা প্রশাসনের কাছে মতামত প্রদান করে। ১৪ জুন জেলা প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে ৯ স্থানে ২০ জুন থেকে ২৯ জুন মোট ১০ দিন অস্থায়ী হাট বসাতে অনুমতি দেয়। অনুমতি পাওয়া হাটগুলো হলো, চসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূর নগর হাউজিং এস্টেট এলাকায় কর্ণফুলী গরু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, একই ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, মুসলিমাবাদ টিকে গ্রুপের খালি মাঠ ও মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড় এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠ।

জেলা প্রশাসন জানায়, অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে এবার বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান সড়ক থেকে ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনক স্থানে হাট বসাতে হবে। বাজারের চৌহদ্দির বাইরে রাস্তায় কোনো পশু রাখা যাবে না এবং খুঁটিও স্থাপন করা যাবে না। পশুর হাটে ইজারাদারের পক্ষ থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রত্যেক হাটে জাল নোট শনাক্তে যন্ত্র বসাতে হবে এবং পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

এদিকে রোগাক্রান্ত এবং ক্ষতিকর ওষুধে মোটাতাজা করা প্রাণী এবার বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য জেলার স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে ২২২টি হাটে থাকবে প্রাণিসম্পদ অধিপ্তরের ৭৩টি মেডিকেল টিম। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমগীর জানান, রোগাক্রান্ত পশু বিক্রি বন্ধ করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিকর ওষুধে প্রাণীকে মোটাজাত করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেলে কিংবা কেউ অভিযোগ করলে তা যাচাই করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই প্রাণী হাট থেকে বের করে দেয়া হবে। এবার নগরী ও জেলা মিলিয়ে ২২২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ৬০টি এবং অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ১৬২টি। এসব হাটে তদারকিতে থাকবে ৭৩টি মেডিকেল টিম।

২২২টি হাটের মধ্যে মীরসরাইয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২১টি, সীতাকুণ্ডে ১০টি, সন্দ্বীপে ১৪টি, ফটিকছড়িতে ৩০টি, রাউজানে ২২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২০টি, হাটহাজারীতে ৭টি, বোয়ালখালীতে ১২টি, পটিয়ায় ১০টি, চন্দনাইশে ১৪টি, আনোয়ারায় ১৫টি, সাতকানিয়ায় ৭টি, লোহাগাড়ায় ১৬টি, বাঁশখালীতে ১১টি, কর্ণফুলীতে ২টি, কোতোয়ালিতে ৪টি, ডবলমুরিংয়ে ৫টি এবং পাঁচলাইশে ২টি গবাদি প্রাণীর হাট বসছে। এসব হাট তদারকিতে থাকবে ৭৩টি মেডিকেল টিম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত