রাজনীতিতে গতি হারাচ্ছে বিএনপি

কোনো মহল থেকে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সাড়া

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠের রাজনীতিতে দিন দিন গতি হারাচ্ছে সংসদের বাইরের থাকা মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি রাজপথে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলেও দলটি এখন পর্যন্ত কোনো সুবিধা করতে পারছে না। তারা কূটনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছেনা। সূত্র জানায়, এ বছরের নভেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষে দিকে ভোট করবে নির্বাচন কমিশন। ভোটের বাকি আর হাতে গোনা কয়েক মাস। অথচ এখন পর্যন্ত বিএনপি দাবি আদায়ে জোরালো কোনো আন্দোলন করতে পারছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে তেমন একটা সক্রিয় নন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভাড়া বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন। আদালতের ভাষায় পলাতক ছেলে তারেক রহমান দেশের বাইরে। তৃণমূল নেতারা কিছুটা সক্রিয় থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে তেমন একটা তৎপর নন। ফলে দেশের বড় একটি রাজনীতিক দল হয়েও মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসি তাদের তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়, সে লক্ষ্যে নতুন করে সংলাপেরও কোনো উদ্যেগ নিচ্ছে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, আমাদের দলে যারা সস্ক্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে একটি বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে যে, তোমরা নির্বাচন করবা, যদি বিএনপি নির্বাচন না করে তাও। তিনি বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি? একটা মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে বাস করছি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন হেন কোনো কাজ নেই, যা করছে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, যারা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা অনুরোধ জানাতে চাই, দয়া করে সাংবিধানিক কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করবেন না এবং জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। এ দেশের মানুষ বরাবরই যেকোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এখনও তারা অধিকার আদায় করে নেবে। নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করতে সরকার আবার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এদিকে ক্ষমতায় আসতে চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনের যাত্রা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আসলে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য, বিক্ষোভ, আন্দোলন ও পদযাত্রা করছে দলটি। বিএনপি এসব পদযাত্রা, মরণযাত্রা না করে নির্বাচনের যাত্রা শুরু করতে পারে।

বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা জোর করে ক্ষমতায় থাকবেন না। কিন্তু ক্ষমতায় আসতে চাইলে অবশ্যই নির্বাচন করেই আসতে হবে। মানুষ যদি বিএনপিকে ভোট দেয়, বিএনপি যদি নির্বাচনে জিততে পারে, তাহলে আমরা বিদায় নিয়ে চলে যাব। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মির্জা ফখরুলদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। কেননা, দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত হয় বিএনপি। অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে কমিটি ভাঙে-গড়ে, বহিষ্কার-পুরস্কার নির্ধারিত হয় এবং কমিটি ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য চলে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আয়নার সামনে নিজের অসহায়-নিরুপায়-পরাধীন চেহারা দেখতে দেখতে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল সাহেব জনগণের বাকস্বাধীনতাকে ওই একই ফ্রেমে বন্দি করে ফেলেছেন। তাই মির্জা ফখরুল সাহেব তোতা পাখির মতো সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে লিপ্ত রয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছুতা তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি পূর্ণশক্তি নিয়ে অংশগ্রহণ করুক; কিন্তু তারা নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছুতা তৈরি করতে চায়।

সরকার বিএনপিকে মাঠ ছাড়া করার ষড়যন্ত্র করছে, মামলা দিচ্ছে গ্রেপ্তার করছে- বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন হয়, সেটিই আমরা চাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপি সব সময় নির্বাচন থেকে পালিয়ে বেড়ায়। মির্জা ফখরুল সাহেব, রিজভী সাহেব নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছুতা তৈরি করতেই এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। হাছান মাহমুদ বলেন, তবে বিএনপি একটি বড় দল, তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, আমি তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানাব। কারণ, আমরা ওয়াকওভার চাই না, খেলে জিততে চাই।