ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পবিত্র হজ আজ

* আরাফাত ময়দানে সববেত হবেন ২০ লক্ষাধিক হজপালনকারী * তিন বছর পর বড় আয়োজনে চলছে হজের আনুষ্ঠানিকতা
পবিত্র হজ আজ

সামর্থবান মুসলমানদের ফরজ ইবাদত পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালিত হবে আজ মঙ্গলবার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এবারের হজে অংশগ্রহণকারী ২০ লক্ষাধিক মুসলিম আজ সৌদি আরবের ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে সমবেত হবেন। হজ পালনকারীদের মুখে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থান। সেখানে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন নির্ধারিত খতিব। পরে একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজীরা। দিনভর অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় আরাফাত ময়দান থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন সবাই। করোনা মহামারি ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিন বছর পর বড় পরিসর ও স্বাভাবিক পরিবেশে এবার হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গতকাল সোমবার মিনায় তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের ধারাবাহিক পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন হাজীরা। এরপর আজ আরাফাতে অবস্থান, হজের খুতবা শোনা, মুজদালিফায় রাত যাপন, আগামীকাল বুধবার মিনায় গিয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি আদায়, মাথা মু-নের মধ্য দিয়ে এহরাম খুলে ফেলা এবং পরবর্তী দুই দিনে জামারায় পাথর নিক্ষেপ ও তাওয়াফে জিয়ারাহ সম্পন্ন করবেন হাজীরা।

সৌদি আরবের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, সারা বিশ্বের লাখ লাখ হজপালনকারী রোববার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত বাস ও অন্যান্য যানবাহনে বা হেঁটে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাঁবুর শহর মিনা প্রান্তরে পৌঁছান। লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মিনা প্রান্তর। গতকাল জোহর থেকে আরাফার দিন (আজ) ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। সেখানে হজ পালনকারীরা ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। নিজ নিজ তাঁবুতেই আজান, জামাতের সঙ্গে নামাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত সময় পার করেন হাজীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিদের জন্য লক্ষাধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু স্থাপন করে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে সৌদি সরকার। নারী ও পুরুষ হজযাত্রী আলাদা তাঁবুতে অবস্থান করেন। সেখানে তাঁবুভিত্তিক খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হয়।

আজ ফজর নামাজ পড়ে সম্ভব হলে গোসল করে কিংবা ওজু করেই হজের মূল কাজ আরাফার ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হবেন সবাই। ফজর নামাজ আদায় করে মিনা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে রওয়ানা হবে তারা। সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত বাস ছাড়াও অধিক সওয়াবের আশায় অনেকে হেঁটে আরাফাত ময়দানে যাবেন। সেখানে হজপালনকারীরা অবস্থান নেবে জাবালে রহমত, মসজিদে নামিরাসহ আরাফাতের বিশাল ময়দানে। লাখো হজপালনকারীর কণ্ঠে মুখরিত হবে- তালবিয়া তথা ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি।

আজ জোহরের নামাজের আগেই হজপালনকারীরা মিনা থেকে পৌঁছাবেন আরাফাতের ময়দানে। কেননা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ায়ই হলো হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। জোহরের পর মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা প্রদান করা হবে। এবারের খুতবা প্রদান করবেন সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।

উল্লেখ্য, জাবালে রহমত নামক পাহাড় থেকে আগে হজের খুতবা প্রদান করা হতো। প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের পূর্ব দিকের পাথরের সিঁড়িতে একটি মঞ্চ ও মিম্বার ছিল। সে সিঁড়ির ৬ষ্ঠ ধাপে দাঁড়িয়ে ৯ জিলহজ হজের খুতবা প্রাদান করা হতো।

বর্তমানে সেই মঞ্চ ও মিম্বার নেই। এখন জাবালে রহমত থেকেও হজের খুতবা দেয়া হয় না। এখন তা প্রদান করা হয় মসজিদে নামিরা থেকে। মাইকের মাধ্যমে দেয়া এ খুতবা এখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করা হয়।

মুসলিম উম্মাহর দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও দিকনির্দেশনা আসবে এ খুতবা থেকে। মুসলিম উম্মাহর চলমান সংকট ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রসঙ্গের পাশাপাশি ধর্মীয় বিভিন্ন বিধিবিধানের আলোচনা থাকবে হজের খুতবায়।

হজ পালনকারীরা তাসবিহ-তাহলিল-তাকবির ও ইসতেগফারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবে। অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এ ময়দানেই মহান আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) কে ক্ষমা করে মিলিত করেছিলেন। খুতবা শেষে জোহর ও আছরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন হাজীরা। সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে তারা। সেখানে গিয়ে তারা মাগরিব ও ইশা এক সঙ্গে আদায় করবেন।

রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করা সুন্নাত। আর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে সামান্য সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তাই ১০ জিলহজ সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে মুজদালিফা ত্যাগ করবেন হাজীরা। মিনায় গিয়ে দুপুরের আগেই জামরাতে আকাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষে করবেন। ১০ জিলহজ কংকর নিক্ষেপের পর কোরবানি আদায় করতে হবে। কোরবানির পরের কাজই হলো মাথা মু-ন বা ন্যাড়া করা। এরপর এহরাম খুলবেন হাজীরা। পরবর্তীতে ১২ জিলহজ পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী জামারায় পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে হজ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন হাজীরা।

সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শান্তিপূর্ণভাবে হজ পালনের জন্য সৌদির সব মন্ত্রণালয় এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকবেন হাজার হাজার কর্মী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মক্কা, মিনা, আরাফাত এবং মুজদালিফার পবিত্র স্থানগুলোতে মহান আল্লাহর অতিথিদের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসা পরিষেবা প্রসারিত করতে ৩২টি হাসপাতাল এবং ১৪০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সব সুবিধা ও পরিষেবাসহ প্রস্তুত করেছে। কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের চাহিদা মেটাতে অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা এবং মোবাইল ক্লিনিক স্থাপন করেছে, অ্যাম্বুলেন্স সজ্জিত করেছে এবং ৩২ হাজার প্যারামেডিক মোতায়েন করেছে।

সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির আগে ২০১৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজে যোগ দেন। মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে দুই বছর সৌদিতে অবস্থানরতদের নিয়ে খুব সীমিত পরিসরে এবং ২০২১ সালে তা ৬০ হাজার এবং সর্বশেষ গত বছর বিশ্বের ১০ লাখ মুসলিম পবিত্র হজের সুযোগ পান। এবার ২০ লাখের বেশি মুসলিম হজ পালন করবেন বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন হজ পালনে সৌদি আরবে গেছেন। এরমধ্যে গতকাল পর্যন্ত হজ পালন করতে এসে ২৭ বাংলাদেশি হজ যাত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত