কারখানা-অফিস-আদালত বন্ধ

ঈদের ছুটিতে স্বস্তি মিলবে গ্রামাঞ্চলে

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়লে শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি লোডশেডিং করা হয়। তবে এখন ঈদের ছুটিতে কল-কারখানা ও অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

জানা গেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লার পর ফার্নেস তেল ও ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। ফলে পায়রাসহ নতুন করে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় কল-কারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। এতে ঈদুল আজহায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং দূর হবে। ফিরবে স্বস্তি।

ঈদুল আজহার আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল সোমবার। আর আজ থেকে পাঁচ দিনের ছুটি শেষে আগামী ২ জুলাই রোববার কর্মজীবীরা কাজে ফিরবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের ছুটিতে কল-কারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় লোডশেডিংও অনেকটা কমে আসে। ছুটির আমেজ শুরু হওয়ায় এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতে স্বস্তি ফিরেছে। এছাড়াও আদানির ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুরোদমে চালু হওয়ায় কয়লাচালিত বিদ্যুতের সরবরাহ বেড়েছে। একইসঙ্গে পায়রাসহ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এতে উৎপাদন বাড়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, সম্প্রতি গরমে বিদ্যুতের যে সংকট ছিল তা সাময়িক। আগেই জানানো হয়েছিল পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। সেই ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি ঠিক হচ্ছে। আগামীতে বিদ্যুতের পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে।

এদিকে কয়লার সংকট কাটিয়ে ২০ দিন পর শুরু হয় ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। গত রোববার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির (৬৬০ মেগাওয়াটের) একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। এতে জনমনে ফিরেছে স্বস্তি। এছাড়া দেশের একমাত্র কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটিমাত্র ইউনিট দিয়ে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। বর্তমানে দুটি ইউনিটে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদে গ্যাসের চাহিদাও কম থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে। এতে তেলচালিত কেন্দ্রর উপরও নির্ভরতা কমবে। শিল্প এবং বাণিজ্যিক চাহিদা না থাকায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হবে। তবে সঞ্চালন এবং বিতরণে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য আগেভাগেই সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঈদে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পিডিবি বৈঠক করেছে। এতে পিডিবি ছাড়াও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কেন বিতরণ এবং সঞ্চালনে সমস্যা হবে। বৈঠকে জানানো হয়, এই ঈদে যেভাবেই হোক এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। বিতরণকারীদের বলা হয়েছে- যেভাবেই হোক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।

বিতরণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারো কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সেই সমস্যা সমাধান করতে হবে। এজন্য গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে তার অভিযোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানালে ভালো হয়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নাম্বার প্রত্যেক গ্রাহকের বিলের ওপরই থাকে। ঈদে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সরাসারি বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সাবস্টেশন কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বে থাকবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানি পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে লোকবল থাকবে।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ডিজেলচালিত ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৯৮৬ মেগাওয়াট। আর ফার্নেস তেলচালিত ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা আছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। আর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট।

গত রোববার বিদ্যুৎ ভবনে দপ্তরগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশপ্রেমের সংযোগ ঘটিয়ে জ্বালানি খাতের দপ্তরগুলোর আধুনিকায়নের কাজ করতে হবে। টিম ওয়ার্ক বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। টিমের সদস্যদের মাঝে স্মার্টনেস ও দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ বরাবরই ভালো করলেও আরো ভালো করতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আপস করা যাবে না। চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সেগুলো মোকাবিলা করেই সামনে এগোতে হবে।