প্রধানমন্ত্রী বললেই পদত্যাগ করব

জানালেন টিপু মুনশি

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বললেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ক্রাইসিস তৈরি হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনাকালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বাণিজ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেন। তবে, কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। পরে মন্ত্রীর প্রস্তাবিত অর্থ কণ্ঠভোটে মঞ্জুর করা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাজার পরিস্থিতি ও জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান। তিনি মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, এতো কিছুর পরেও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না? তিনি প্রশ্ন রাখেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে কে বসিয়েছে?

জবাবে মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।

এ সময় বাজার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম; সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে। সেই ক্রাইসিস সামাল দিতে আমাদের কষ্ট হবে। এজন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।

এর আগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ এটিকে মানুষ সিন্ডিকেটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জড়িত। অনেকে সংসদে বলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমি এভাবে বলতে চাই না। তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন, কোন দ্রব্যের দাম কমবে, তার পরদিনই ওই দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও কেন পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হলো?

জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, বাজারে গিয়ে দেখেছি অনেকে কেঁদেছেন। মানুষের পকেটে টাকা নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেট। ডিমের বাজারে কারা সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়। এটা তো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে না। মন্ত্রী যেখানে সিন্ডিকেটের কথা বলছেন সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী কেন তাদের ধরেন না। তিনি তো নিজেই ব্যবসায়ী, তার তো জানার কথা কারা সিণ্ডিকেট করে। তার কোনো ভূমিকা নেই।

জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। এর মন্ত্রীর যদি ডায়নামিজম না থাকে, তাহলে দাম তো বাড়বেই। একজন শুধু কাজ করবেন, আর সবাই ঘুমাবেন তাহলে তো দেশ চলবে না। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এটা চাইলে অবশ্যই সম্ভব।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে সব দাম রেড়েছে। সিন্ডিকেট কি এতো শক্তিশালী, সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের মধ্যে সিন্ডিকেট থাকলে তাও খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

রওশন আরা মান্নান বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। ব্যবসার আগেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, বারবার একটি কথা উঠে আসছে, আমি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা আমার দ্বারা সুবিধা পাচ্ছেন। যারা এটা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব, তাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতা কত বছরের তা জানি না। আমি কিন্তু ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি ব্যবসা করি আজ ৪০-৪২ বছর। কিন্তু ঘুরে ফিরে কেউ বলেন না আমি রাজনীতিবিদ। তারা বলেন, আমি ব্যবসায়ী, সুযোগটা আপনি ব্যবসায়ীদের দিচ্ছেন।

মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কথাটা হলো দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বারবার বলছেন মানুষ কষ্টে আছেন। মানুষকে বলছেন সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। আজকে আমরা কী আমাদের জন্য এই অবস্থায় এসেছি? বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কিন্তু আমাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক কথা আসছে, বলা যখন শুরু হয়- ডানে বামে সব চলে আসে। ডিম, সেটার খবর তো আমি জানি না। ডিমের দাম বাড়া বা কমানোর ব্যাপারে আলাদা মন্ত্রণালয় আছে, তারা ঠিক করে দেয়।

দাম বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের কথা বলা হয়েছে। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম, কৃষকরা যেন এমন একটি দাম পায়, তারা উৎপাদনে উৎসাহিত হয়। পেঁয়াজে আমাদের বছর ৬ থেকে ৭ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে। কৃষকরা বেটার প্রাইজ হলে উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হবে। আমাদের এই পদক্ষেপে ঘাটতি কিন্তু অর্ধেকে নেমে আসছে। তবে এটাও ঠিক কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আমদানি করেছি। ভারতের আমদানি পেঁয়াজের কেজি এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আজ আমাদের দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। আমরা চেষ্টা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এটা ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে।

মন্ত্রী বলেন, সব কিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। তরপরও দায় আমি নিয়ে বলছি আমরা সর্বৈবভাবে চেষ্টা করছি কী করা যায়। তিনি বলেন, অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি কমে গেছে বলে এখানে বলা হয়েছে। কিন্তু সেসব দেশে যখন ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল তখন আমাদের ৮ শতাংশ ছিল সেটাও কিন্তু বলা উচিত। সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে ভালো কিছু থাকলে সেটাও বললে আমরা উৎসাহিত হই। এই দুরবস্থার মধ্যেও আমরা প্রায় ৫৮ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করেছি। আমাদের রপ্তানি কিন্তু বেড়েই চলেছে। এটাও কিন্তু বলা দরকার। তিনি আরো বলেন, চিনির দামটা আমি নিজেও উপলব্ধি করি। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। আগেও বলেছি, এটার ডিউটি স্ট্রাকচারটা যদি কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে এর দাম ১০০ টাকার মধ্যে চলে আসবে। সেটা হয়তো উনি করবেন। এর আগেও তিনি করেছিলেন। গত এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমরা ২০ টাকা তেলের দাম কমিয়েছি। তবে এটা ঠিক সব সময় ১০০ ভাগ সফল হই, তা নয়। স্বীকার করে নিচ্ছি অনেক সময় বাস্তবায়নটা ধীরগতিতে হয়।