ঢাকার পুলিশ কমিশনার

আসামিরা জেলে থাকলে চুরি-ডাকাতি কম হবে

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

রাজধানীতে ঈদুল আজহা নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে গত এক মাস পেশাদার অপরাধীদের (চোর, ছিনতাইকারী, মলম ও অজ্ঞানপার্টি) বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল পর্যন্ত ৬০০ জন পেশাদার অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। ঈদের আগে যেন তাদের জামিন না হয়, সেই ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা করছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পেশাদার আসামিরা জেলে থাকলে ফাঁকা ঢাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা তেমন একটা ঘটবে না। পাশাপাশি জাল টাকা উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা উদ্ধার ও একটি চক্রের প্রধানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ফাঁকা ঢাকায় উঠতি বয়সের অনেক তরুণ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের প্রতিযোগিতা করেন। আমি এ বিষয়ে কঠোরভাবে বলছি- এ ধরনের প্রতিযোগিতা করবেন না। ব্যারিকেট তৈরি করে আঁকাবাঁকা (জিগজ্যাক) গতিতে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করব। সড়ক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, প্রতি বছর ঈদের পর সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয়। এ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে আমরা দেখেছি, ড্রাইভারা ট্রিপ নিয়ে বাড়িতে রেস্টে থাকেন। হেলপারদের গাড়ি দিয়ে দুই-চারটা ট্রিপ মারতে বলেন ড্রাইভার। হেলপারা যখনই বাস-ট্রাক নিয়ে রাস্তায় বের হন, তখনই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদের পরে যে ক’দিন ড্রাইভার ছুটিতে থাকবেন, সে কয়দিন যেন গাড়ি বন্ধ থাকে। কোনোমতে হেল্পার যেন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের না হন। গত ঈদে আমরা দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আশা করব, এ ঈদে দুর্ঘটনা পরিমাণ কমে আসবে। মহাসড়কের ওপরে একটি আস্থা সৃষ্টি হবে। পশুর হাটের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে খোলা মাঠ তেমন একটা নেই। তারপরও ঢাকাবাসীর সুবিধার্থে আমাদের দুই মেয়র ২১টি পশুর হাটের ব্যবস্থা করেছেন। পশুর হাট ম্যানেজ করেই যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা সফলতার সঙ্গে তা করে যাচ্ছি। গাবতলীর হাটে দেখবেন পশুর জন্য গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। হাটের নিরাপত্তার সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছি। প্রতিটি হাটে হাসিল ঘরে টাকা দেওয়ার জন্য বাইরে ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি হাটে জাল নোট শনাক্তের জন্য মেশিনের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া পুলিশ ও

ব্যাংকের কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। হাটগুলোতে ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা নিয়ে যেন বাড়ি যেতে না হয়, সেজন্য অস্থায়ী ব্যাংকের ব্যবস্থা করেছি। অজ্ঞান ও মলমপার্টির দৌরাত্ম্য যেন না থাকে, সেজন্য সচেষ্ট আছি। কোরবানির ঈদ এলে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সতর্ক। গত পরশুদিন ডিবি পুলিশ জাল ২ কোটি টাকার নোটসহ একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, ঈদুল আজহায় তিনগুণ চ্যালেঞ্জ। ঈদুল ফিতরের শুধু ঘরমুখো মানুষ ছিল। এখন (ঈদুল আজহায়) ঘরমুখো মানুষ আছে, উল্টো দিক থেকে গরুর গাড়ি এবং রাজশাহী ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফলবাহী গাড়ি আসছে। এ কারণে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এর সঙ্গে আরেকটি পরিবেশ যোগ হয়েছে সেটা হচ্ছে বৃষ্টি। চতুর্মুখী চাপ থাকা সত্ত্বেও সবার সার্বিক সহযোগিতায় সবকিছু ঠিক আছে। আজকের দিনের পরে শহরে ও হাইওয়েতে ঈদ-সংক্রান্ত যানজটের সমস্যা থাকবে না। এ সময় কমিশনার ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে যাত্রীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন টার্মিনাল ও হাটবাজার ঘুরে যে পরিবেশ পেয়েছি, তা সন্তোষজনক। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কোথাও একটু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মহাখালী টার্মিনাল ঢাকা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনাল। এটা ঢাকা শহরের মাঝখানে অবস্থিত এবং জায়গাটাও অনেক সংকীর্ণ। এখানকার সার্বিক পরিস্থিতি কেমন, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে কি না কিংবা কেউ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য আমরা বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসেছি। যাত্রীদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটবেন না। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ’ পুলিশ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-নম্বরে যোগাযোগ করবেন। যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ঈদুল ফিতরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিলাম। তাই ফাঁকা ঢাকায় তেমন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এবারও আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও সাদা পোশাকে নিয়োজিত রয়েছে।

মালিক ও শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদের সময় চালকরা নিজ বাড়িতে থাকেন। তখন হেলপাররা গাড়ি নিয়ে যাতে রাস্তায় বের না হন, এ ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, গরুর হাটের আশপাশে যানজন নিরসরনে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ২১টি গরুর হাটের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, জাল টাকা শনাক্তের মেশিন রাখার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া হাসিল নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য আমাদের পুলিশ সদস্যরা সতর্ক রয়েছে। পাশাপাশি গরু ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ব্যাংকের অস্থায়ী বুথেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাস টার্মিনাল পরিদর্শনকালে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মুহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার এবং ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।