জমে উঠেছে পশুর হাট বাড়ছে ক্রেতার ভিড়

মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল। শেষ সময়ে রাজধানীর পশুর হাটগুলোয় কোরবানির পশু বেচাকেনা জমে উঠেছে। তবে হাটে পশু পর্যাপ্ত উঠলেও গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি দাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাটে ছোট-বড় পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। গরুর পাশাপাশি হাটে ছাগলও রয়েছে।

গতকাল সরেজমিন রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর, তেজগাঁওসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে প্রতি বছরের মতো এবারো জমে উঠেছে পশুর হাট। গত কয়েক দিন যারা হাটে এসে পছন্দের পশু ও দরদামের খোঁজখবর নিয়ে ফিরে গেছেন, তাদের এখন কেনার পালা। এবারো যথারীতি মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। অধিকাংশ ক্রেতার অস্বস্তি যেটুকু সেটা কোরবানির পশুর চড়া দাম নিয়ে। কেউ কেউ আবার শেষ মুহূর্তে কেনার ঝুঁকি এড়াতে একটু বেশি দামে হলেও কিনে নিচ্ছেন পছন্দসই কোরবানির পশু। তাই তো সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে হাট থেকে কোরবানির পশু কিনতে দেখা গেছে মুসল্লিদের। অন্যদিকে সীমিত লাভে হলেও শেষ সময়ে গরু ছাড়ছেন ব্যাপারীরা।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু, ছাগল, মহিষ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গতকাল বৃষ্টিতে পশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার রাজধানীর দুই সিটিতে বসেছে ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট। হাটগুলো জমে উঠলেও গত দুই দিনের বৃষ্টিতে এখন বেহাল অবস্থা। কর্দমাক্ত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। আফতাবনগর হাটে দেখা গেছে, হাটের সীমানা ছাপিয়ে গরু চলে গেছে অনেক দূর। সেখানে হাঁটার রাস্তায়ও পানি জমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজছে গরুগুলো। এ অবস্থায় আশপাশে দোকানপাট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরু রেখে বেশিদূর যাওয়াও তাদের জন্য ঝুঁকি। গতকাল দুপুরে অঝোর বৃষ্টিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ভিজতে দেখা গেছে। কবির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত সোমবার গরুর সঙ্গে আমরাও বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখন বৃষ্টিতে ভেজা মানেই জ্বর আসতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। সে কারণে চিন্তায় আছি।

কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু বিক্রেতা কামরুল ইসলাম বলেন, এবার ১৫টি গরু হাটে এনেছি। এরইমধ্যে দুটি বিক্রি করেছি। আরো ১৩টি আছে। তিনি আরো বলেন, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত গরু বিক্রি করা যায়। আশা করছি, ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।

বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মতো বাংলাদেশের মতো কোরবানির জন্য গরুকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। পছন্দের পশু দরদাম করে এরইমধ্যে পশু ক্রয় শুরু করেছেন। পশুর হাটে হাঁকডাক দিয়ে পশু বিক্রি চলছে। এবারও আছে বাহারি নামের গরু যেমন- মিস্টার বাংলাদেশ, রাজাবাবু, জিদান পালোয়ান, কমান্ডো, বিএল, গোল্ড কয়েন, বুড়ো মহিষ- পাঠান ও সুলতান। তবে গোখাদ্যের বাড়তি দামের জন্য গত কয়েক বছরের মতো এবারো কোরবানির পশুর দাম বাড়তি বলে মনে করছেন খামারিরা। ঢাকায় ১৫টি অস্থায়ী এবং দুটি স্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে।

পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। যার ফলে এবারো দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। হাটের পাশাপাশি রাজধানীতে ক্রেতাদের পছন্দের পশু বাছাইয়ের সুবিধার্থে দেশি-বিদেশি প্রজাতির নানা ধরনের গরু-ছাগলের সমারোহে মুখরিত অনলাইনে। ইউটিউব ও ফেইসবুকে বিশাল আকৃতির লাখ লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর দেশে কোরবানির পশুর যোগান গত বছরের তুলনায় বেশি। দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটবে। হাটে কোরবানির পশু নিয়ে আসা ব্যাপারীদের দাবি, পশুর খাদ্যের দাম অনেকে বেড়ে গেছে। গরু-ছাগলের নানা রোগবালাইয়ে ওষুধের পেছনেও খরচ বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পশু লালন-পালনের ব্যয় মিটিয়ে এবছর তাদের খুব একটা লাভ হবে না।

কোরবানির পশু কিনতে আসা হাজী আব্দুল হানিফ মিয়া বলেন, অসংখ্য পশু রয়েছে হাটে। তবে এবার দাম বাড়তি। তাই ক্রেতারা বাজেট অনুযায়ী ভালো মানের গরু কিনতে পারছে না। যে গরুর দাম হওয়া উচিত ৮০ হাজার টাকা, বিক্রেতারা সেটার দাম হাঁকছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত কোরবানির ঈদের তুলনায় এবার পশুর দাম অনেক বেশি। একই সাইজের গরু গতবারের চেয়ে এবার ৪০ হাজার টাকা বেশি দিয়েও কিনতে পারলাম না। তবে ক্রেতাদের এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ গরুর ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু পালনে তাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় গরু নিয়ে আসতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সে তুলনায় গরুর দাম তেমন বাড়েনি বলে মনে করছেন তারা। ব্যাপারীরা বলছেন, এ বছর কোরবানির পশু বিক্রি করে তারা আশানুরূপ লাভ পাবেন না।

মানিকগঞ্জের মওলুদ ব্যাপারী গাবতলী হাটে ৫৫টি মাঝারি মানের গরু নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে ২১টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, প্রতিটি গরু প্রত্যাশার থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে বিক্রি করেছেন।

মওলুদ ব্যাপারী বলেন, ট্রাক ভাড়া করে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে এসেছি। কিন্তু ঢাকার ক্রেতারা কেনার মতো দাম বলছেন না। পশু পালনে খরচ কতটা বেড়েছে তা শুধু ব্যাপারী বা গৃহস্থরাই জানেন। আশা করছি, সবগুলো কোরবানির গরু ভালোভাবে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারব।

ব্যাপারী কবীর উদ্দিন ও আবদুস সালাম বলেন, গাড়িভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের পশুর খাদ্যের দাম। এ কারণে পশুর দামও এবার বাড়তি গুনতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। এই দুই ধরনের গরুর দামই বাড়তি।