ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা উদযাপিত

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা এবং ত্যাগ ও আনন্দের মহিমায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারা দেশে উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদগাহ, মসজিদ বা খোলা জায়গায় জামাতের সঙ্গে ঈদের দুই রাকাত নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে যান। চিরবিদায় নেয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দেন। বর্ষা মৌসুমের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বিঘ্ন পরিস্থিতি ছাড়া এবার বেশ স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেছেন সবাই। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী পশু কোরবানি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ঈদের এই প্রধান জামাতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নামাজ আদায় করেন। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ নগরবাসী এই ঈদ জামাতে শরিক হন।

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। প্রতিবছরের মতো এবারো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম জামাত সকাল ৭টার জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী। দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ কারী মো. আতাউর রহমান। তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।

চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।

সারা দেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার আগের জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়।

এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর কর্মজীবী মানুষের অনেকেই ঈদ করতে গ্রামে ছুটে যান। তাই যানজটের চিরচেনা রাজধানী শহর অনেকটাই ফাঁকা। ঈদের দিন তাই ফাঁকা রাজধানীতে অনেকেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করেন।

উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ্ কোরবানি ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। নামাজের খুতবায় খতিব কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। তাই গতকাল শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কোরবানি করতে দেখা যায়। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হননি। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়। অনেক ধনী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতাদের সৌজন্যে গরিবদের জন্য আলাদা কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানান। ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। এছাড়া অনেক ঈদগা বা মসজিদও সজ্জিত করা হয়।