ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বস্তির বৃষ্টিতে অস্বস্তির ঈদ

স্বস্তির বৃষ্টিতে অস্বস্তির ঈদ

এবারের ঈদুল আজহার ছুটি পুরোটাই ছিল বৃষ্টিস্নাত। ঈদের আগে ও পরের দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে ঢাকায় ঈদের ছুটিতে প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ায় মানুষের ভোগান্তিও কম হয়নি। গরমের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে ঠিকই। তবে অস্বস্তিতে কেটেছে পুরোটা ঈদের ছুটি। প্রথমত যারা কোরবানির পশু কিনতে হাটে গেছেন, তারা বৃষ্টির বিড়ম্বনায় পড়েছেন। কোরবানির হাটে মাথার ওপর বৃষ্টি আর পায়ের নিচে কাদা-মাটি, গরুর বর্জ্য, সেই সঙ্গে খড়কুটোর মাখামাখি কোরবানির হাটের পরিবেশ ছিল অস্বস্তিকর। যারা পশু কিনতে গেছেন তারা এবং গরুর ব্যবসায়ীরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি করেছেন। আর অবুঝ গরুরগুলোও কম-বেশি ভিজেছে। কোনো কোনো হাটে ছাউনির ব্যবস্থা করা হলেও বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পায়ের নিচে কাদায় মাখামাখি হয়েছে। গরুগুলো বৃষ্টিতে ভিজেতে ভিজতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গরুর ক্লান্তির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের হতাশাও বাড়তে থাকে। ঈদের আগের দিন অনেক হাট ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। নামি-দামি ‘সেলিব্রেটি’ গরুগুলো খামারের আরাম আয়েশ কোরবানির হাটে না পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ক্লান্তি। কমে যায় ক্ষিপ্ততা। দামও কমে যায় সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। কোনো কোনো গরু অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। কেননা হাটে গুরুগুলো তোলার আগে পরিবহন ভাড়া ও গরুগুলোর খাবার কিনতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা অনেক বেশি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে কম দামে গরু বিক্রি করতে যেসব ব্যবসায়ী ও খামারি রাজি হননি। তাদের গরুগুলো আবার নিজের বাড়ি কিংবা খামারে ফেরত নেয়ার ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে যারা এসব ঝামেলা এড়াতে চেয়েছেন তারা আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়েই গরুগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। বিশাল আকৃতির গরু ট্রাকে তুলতে গিয়ে কোথাও কোথাও গরু আঘাত পায়। অবশেষে ওইসব গরু ট্রাকে উঠাতে না পারায় সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে জবাই করে মাংস বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আসলে কোরবানির পশুর হাট কোনো বছর থাকে গরু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। আবার কোনো কোনো বছর থাকে ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে। এবার গরুর বাজার ছিল ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে। শেষের দিকে গরু ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এবারের ইদুল আজহায় যেভাবে বৃষ্টি হয়েছে অন্য কোনো বছরে এমনিটা হয়নি। গরুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে যাওয়ায় বর্জ্য অপসারণ অনেকটা সহায়ক হয়েছে। কোরবানির পর রাস্তা-ঘাটে যেভাবে ময়লা আবর্জনা থাকে এবার তা চোখে পড়েনি। ঢাকার দুই সিটি মেয়র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রক্ষা করেছেন। রাস্তা-ঘাটে এবার তেমন একটা ময়লা- আবর্জনা চোখে পড়েনি। তবে ঈদুল অজহার পরের দিনও অনেকে পশু কোরবানি দেয়ায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য অপসারণের কাজটি করতে হয়েছে।

প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও বাসা-বাড়ির আশপাশে রাস্তা-ঘাট ও ফাঁকা স্থানে গরু জবাই করা হয়। ফলে গরুর উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করতে সিটি কর্পোরেশনের গাড়িগুলোকে অলি-গলিতে ঢুকতে হয়। এটা রীতিমতো একটা বাড়তি বড়ম্বনা।

ঈদের আগের দিন ও পরের দিন বৃষ্টি হওয়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষ পড়ে বিপাকে। বিশেষ করে রাজধানীর রাস্তা-ঘাটে পানি জমে যাওয়ায় মানুষ দুর্ভোগ মারিয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসতে থাকেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনেকে ভিজে যান। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচণ্ড যানজটে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবহনের মধ্যে আটকে পড়ে থাকতে হয়। রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়েনি।

বৃষ্টির কারণে ঈদের নামাজ আদায় করতে মুসল্লিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বৃষ্টির পর রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় মানুষকে যাতায়াত করতে হয়েছে অনেক সতর্কতার সঙ্গে। কেননা অনেক রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় মানুষ স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারেনি। বাস টার্মিনাল এলাকায় যানজটের সঙ্গে জনজটের সৃষ্টি হয়।

দূরের যাত্রায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। বৃষ্টির কারণে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ফুটপাতের দোকানদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেকটা বিপাকে পড়েন। বৃষ্টির জন্য ১০০ টাকার কাঁচামরিচ ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে। বাজারে কমে যায় শাক-সবজির সরবরাহ। এবারের কোরবানির ঈদে আষাঢ় মাসের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় মানুষ খুব একটা স্বস্তি পায়নি। তবে ঈদের তিন দিনের ছুটিতে গরমের কষ্ট তেমন একটা ছিল না। বৃষ্টিতে গরম কম অনুভূত হয়েছে। মানুষ মাংস ও তৈলাক্ত খাবার খেয়ে তেমন একটা অস্বস্তির মধ্যে পড়েনি। ঈদের ছু্িটতে আমোদপ্রিয় মানুষ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এবার স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারেনি।

মানুষ যত দুঃখকষ্ট ভোগ করুক না কেন ঈদ তো ঈদই। ঈদ তো আনন্দের, ঈদ তো আর বারবার আসে না। দুটি ঈদকে সামনে রেখে মানুষ সারা বছরের হিসাব কষতে থাকেন। আগামী ঈদ হোক সবার জন্য আরো আনন্দময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সেই কামনাই থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত